আফতাব হোসেন
শরতের শুভ্রতায় ছুঁয়ে গেছে কাশবন। সাদা-কালো মেঘের সঙ্গে হালকা বাতাসের লুকোচুরি আর সাদা ধবধবে ফুলের মনমাতানো দোলা খেতে প্রকৃতিপ্রেমিরা কিছুটা প্রশান্তির জন্য ছুটছেন বৃহ্মপুত্র-যমুনার নদ পাড়ি দিয়ে গাইবান্ধার চরাঞ্চলে। জেলার ফুলছড়ির বালাসীঘাট, টেংরাকন্দি, এরেন্ডাবাড়ি, সাঘাটার গোবিন্দী, মুন্সিরহাট, কালুরপাড়া, কুমারপাড়া, সদর উপজেলার মোল্লারচর, সুন্দরগঞ্জের কাপাসিয়ার চরের প্রকৃতির তৈরি বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন মানুষের স্বস্তির স্থানে পরিণত হয়েছে। তবে, স্থানীয় প্রশাসন বলছেন, প্রকৃতির নিজস্বতায় সৃষ্টি হওয়া এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সাথে বাড়ছে মানুষজনের জীবনজীবিকার উৎস্য।
শরতে এই দৃশ্য সারাবাংলার চরাঞ্চলের। গাইবান্ধার বালাসীঘাট সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী জেগে ওঠা বালুর চরে কাশফুল এই অপার সৌন্দর্য একদিকে যেমন মনের খোরাক হয়ে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে, অন্যদিকে জীবিকার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে স্থানীয়দের। শরতের আকাশে মেঘের ভেলা। তারই নিচে বালুচরে ছড়িয়ে আছে কাশফুল- দিগন্ত প্রসারী প্রকৃতির এ এক অপরূপ লীলা। দূর থেকে দেখলে মন টেনে নিয়ে যাবে এই সুন্দরের কাছে-এমনই আকর্ষন থেকে শহরের বন্ধী জীবন থেকে মুক্তি পেতে তাইতো শিশু কিশোরসহ সব বয়সীদের কাশ ফুল দেখার আনন্দে ছুটে আসা। গাইবান্ধা শহরের বাসিন্দা উম্মে কুলসুম শাপলা জানান, শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা প্রশান্তির জন্য সন্তানদের নিয়ে এখানে আসা। বেশ ভাল লাগছে এবং শিশুরা প্রকৃতির সাথে পরিচিতিও হচ্ছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
চরাঞ্চলগুলোতে কাশবন একটু আগেভাগেই অপরূপ সাঁজে সাঁজলেও এ বছর শেষ সময়ে বন্যা হওয়ায় একটু বিলম্বে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। তাই বলে প্রকৃতিপ্রেমীরা মন খারাপ করে বসে নেই। তারা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে ছুটে যাচ্ছেন বালাসীঘাটের নদী পার হয়ে কাশবনে।
সাঘাটার কিশোরী নিশাত সুলতানা জানান চরের মুক্ত বাতাসের সাথে কাশফুলের সৌন্দর্যে ভালই লাগে। এজন্য বন্দুরা মিলে নৌকা ভাড়া করে এখানে এসেছি।
কবি আবু তাহের জানান, প্রকৃতিই মানুষের জীবনের একটি অংশ। প্রকৃতির সাথে মানুষজনের সময় কাটাতে হয়। আর স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা প্রকৃতির সৌন্দর্যও উপভোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এই প্রকৃতিপ্রেমীদের নৌকা ভ্রমনে বালীঘাট কেন্দ্রিক বেশ কিছু পরিবারের বেড়েছে আয় উপার্জন। এই ঘাটের নৌ মালিক ইউনুস আলী জানান, লোকজনের সমাগম বাড়ায় বেশ কয়েকটি পরিবারের আয়-উপার্জনও বেড়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদ, বালাসীঘাট নৌবন্ধর ও আশপাশে চর ও কাশফুল প্রকৃতিপ্রেমিদের প্রশান্তির পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের জীবনজীবিকার আয়ও বেড়েছে বলে জানান বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএস এর নির্বাহী পরিচালক শাহাদৎ হোসেন মন্ডল।
শুভ্র ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের জানান, সরকারি-বেসরকরি পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে নদী ও চরাঞ্চল কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে গাইবান্ধায়।
আপনার মতামত লিখুন :