৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার প্রথম হানাদার মুক্ত হয় ফুলছড়ি থানা


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ৮:০০ অপরাহ্ণ / ১২৮
৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার প্রথম হানাদার মুক্ত হয় ফুলছড়ি থানা


আফতাব হোসেন:
৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধা জেলার প্রথম হানাদার মুক্ত হয় ফুলছড়ি থানা। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সম্মূখযুদ্ধে অংশ নিয়ে ফুলছড়ি থানা সদরকে হানাদার মুক্ত করে। ফুলছড়িকে পাকিস্থানঅ হানাদার মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা ৪টি দলে বিভক্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে থানার চারপাশে অবস্থান নেয় এবং সূর্য উঠার আগেই ফুলছড়ি থানায় আক্রমন করে। এতে পাকিস্থানী বাহিনীর ২৭ জন সৈন্য নিহত এবং ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে বেলা ওঠার সাথে সাথেই পাকিস্তানী সৈন্যরা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।
পাকসেনাদের অন্যতম ঘাটি ছিল গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা ও তিস্তামূখঘাট রেলওয়ে ফেরিঘাট। নৌ ও রেলপথে পাকিস্তানী হানাদাররা এখানে এসে অবস্থান নিয়ে উত্তরাঞ্চলের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, ধর্ষন ও লুটপাটসহ সবধরণের অপকর্ম করতো। এছাড়াও নৌপথে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের মাইনকার চরে যেতে না পারে সেজন্য তারা নিয়মিত টহল দিতো।
এই অঞ্চলের শক্তিশালী পাক হানাদার ঘাটি দখলে নিতে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠিত হয়ে পরিকল্পনা করতে থাকে তাদের পরাজিত করার জন্য। সেই অনুযায়ী চারটি দলের মধ্যে ৩টি দল ৪ ডিসেম্বর ভোররাতেই ফুলছড়ি থানায় আক্রমন করে। মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটের সম্মুখ যুদ্ধেই পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পন করে পাকিস্থানের ২ শতাধিক সৈন্য। মুক্তিযোদ্ধারা থানার গোলাবারুদ ও অস্ত্র নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এই সম্মূখ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন, কবেদ আলী, জাহেদুর রহমান বাদল, ওসমান গনি ও আব্দুল সোবাহান। ফুলছড়ি হানাদার মুক্ত হওয়ার পরের দিন শহীদ বীর যোদ্ধার মরদেহ গরুর গাড়ীতে করে সাঘাটার তৎকালীন সগুনা ইউনিয়নের ধনারুহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাঁচটি কবরে সমাহিত করা হয়।
১১নং সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গৌতম চন্দ্র মোদক জানান, শহীদদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী সাঘাটা উপজেলার সেগুনা ইউনিয়নের খামার ধনারুহা গ্রামে এনে কবরস্থ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই ৫ শহীদের সম্মানার্থে ইউনিয়নটির নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর রাখা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে শহীদদের কবরস্থানগুলো সংরক্ষণ করা হয় যথাযথভাবে।
আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের স্বজনদের সম্মান ও মর্যাদা জানাতে সাঘাটার মুক্তিনগরে আয়োজন করা হয় নানা কর্মসূচি। সর্বস্তরের মানুষ এই স্মৃতিস্মম্ভে এসে ফুল দিয়ে শহীদ ও তাদের স্বজনদের সম্মান জানান।