Dhaka ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বন্যা ঝুঁকিতে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র চরের ৭০হাজার পরিবারের বসতভিটা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩
  • ৪৭০ Time View

আফতাব হোসেন:
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরের আব্দুল করিম। গত তিন বছরে চারবার নদীভ্ঙানের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি নিয়ে কোনমতে ঠাই মিলেছে পাশের চর খারজানিতে। অর্থের অভাবে বাড়ির ভিটে উচু করার সামর্থ্য না থাকায় বন্যার ঝুঁকিতেই সময় কাটছে তার। একই চিত্র ফুলছড়ি উপজেলার পিপুলিয়া চরের জুয়েল মুন্সি’র। তিনি চলতি বছর নদীভাঙনে পিপুলিয়া ও বাজ ফুলছড়ি গ্রামের অন্ততপক্ষে দুই হাজার পরিবার নদীভ্্াঙনে বাড়িঘর তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে বন্যা ঝুঁকিতে আছে। সাঘাটা উপজেলার পাতিলবাড়ি, দিঘলকান্দি, গুয়াবাড়ি গ্রামে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন নীঁচু চরে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ১৯ লাখ পরিবারের মোট জনসংখ্যা ৭৯ লাখ ৯২হাজার ৭৭৬ জন। তিন জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তনের ৩০ শতাংশ নদী ও চরাঞ্চল। মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ চরাঞ্চলে বসবাস করে। উত্তরের তিন জেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে অন্ততপক্ষে ৪ হাজার পরিবার ভ্ঙানের শিকার হয়ে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নেয়।
ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, গত এক বছরের ফুলছড়ি উপজেলার চারটি পয়েন্টে নদীভ্ঙানে প্রায় ৪ হাজার পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের বসতভিটা উচু করে ঘর স্থাপনের সামর্থ্য না থাকায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আসন্ন বন্যায় এসব পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তিনি জানান।
সাঘাটা উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান জাহ্ঙ্গাীর কবির বলেন, চরাঞ্চলের মানুষজন যাতে বন্যা মুক্ত থাকতে পারে এজন্য সরকার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ক্লাস্টার ভিলেজ নির্মান করছে। এরপরেও নদীভাঙনে কিছু পরিবার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে-যাদের বন্যা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, উত্তরাঞ্চলে চর কেন্দ্রীক লাখো মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে। নদীভ্ঙানে শত বছরের চরও ভে্েঙ্গ যাচ্ছে। এতে করে মানুষজনের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে চরাঞ্চলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও ক্লাস্টার ভিলেজ নির্মান হলেও তা খুবই কম। একারণে প্রায় অর্ধেক মানুষ বন্যা ঝুঁকিতে বসবাস করছে বলে তিনি জানান।
পানি বিজ্ঞানী ড.আইনুন নিশাত জানান, পরিবর্তনজনিত জলবায়ুর কারণে চরের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচেছ। এজন্য চরের মানুষের উন্নয়নে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা। এজন্য তিনি বলেন, চরের জন্য পৃখক বোর্ড গঠন করে বন্যা কবলিত মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরের তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রে ভ্ঙানে ৮০ হাজার পরিবার নদীভ্ঙানে শিকার হয়েছে। নদীভ্ঙানে তীর রক্ষার জন্য সরকার পরিকল্পনা করলেও চরাঞ্চল ভ্ঙান প্রতিরোধে কোন পরিকল্পনা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বন্যা ঝুকিতে থাকা মানুষজন বসতভিটা উচুঁর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপগ্রহণ করবে এমন দাবী বন্যা ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

বন্যা ঝুঁকিতে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র চরের ৭০হাজার পরিবারের বসতভিটা

Update Time : ০৪:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩

আফতাব হোসেন:
গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া চরের আব্দুল করিম। গত তিন বছরে চারবার নদীভ্ঙানের শিকার হয়ে ঘরবাড়ি নিয়ে কোনমতে ঠাই মিলেছে পাশের চর খারজানিতে। অর্থের অভাবে বাড়ির ভিটে উচু করার সামর্থ্য না থাকায় বন্যার ঝুঁকিতেই সময় কাটছে তার। একই চিত্র ফুলছড়ি উপজেলার পিপুলিয়া চরের জুয়েল মুন্সি’র। তিনি চলতি বছর নদীভাঙনে পিপুলিয়া ও বাজ ফুলছড়ি গ্রামের অন্ততপক্ষে দুই হাজার পরিবার নদীভ্্াঙনে বাড়িঘর তুলে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে বন্যা ঝুঁকিতে আছে। সাঘাটা উপজেলার পাতিলবাড়ি, দিঘলকান্দি, গুয়াবাড়ি গ্রামে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন নীঁচু চরে আশ্রয় নিয়েছেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ১৯ লাখ পরিবারের মোট জনসংখ্যা ৭৯ লাখ ৯২হাজার ৭৭৬ জন। তিন জেলার মোট ভৌগোলিক আয়তনের ৩০ শতাংশ নদী ও চরাঞ্চল। মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ চরাঞ্চলে বসবাস করে। উত্তরের তিন জেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে অন্ততপক্ষে ৪ হাজার পরিবার ভ্ঙানের শিকার হয়ে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নেয়।
ফুলছড়ি উপজেলার ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, গত এক বছরের ফুলছড়ি উপজেলার চারটি পয়েন্টে নদীভ্ঙানে প্রায় ৪ হাজার পরিবার স্থানান্তরিত হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের বসতভিটা উচু করে ঘর স্থাপনের সামর্থ্য না থাকায় বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। আসন্ন বন্যায় এসব পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে তিনি জানান।
সাঘাটা উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান জাহ্ঙ্গাীর কবির বলেন, চরাঞ্চলের মানুষজন যাতে বন্যা মুক্ত থাকতে পারে এজন্য সরকার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, ক্লাস্টার ভিলেজ নির্মান করছে। এরপরেও নদীভাঙনে কিছু পরিবার বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে-যাদের বন্যা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, উত্তরাঞ্চলে চর কেন্দ্রীক লাখো মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করে। নদীভ্ঙানে শত বছরের চরও ভে্েঙ্গ যাচ্ছে। এতে করে মানুষজনের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন মারাত্মকভাবে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে চরাঞ্চলে বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও ক্লাস্টার ভিলেজ নির্মান হলেও তা খুবই কম। একারণে প্রায় অর্ধেক মানুষ বন্যা ঝুঁকিতে বসবাস করছে বলে তিনি জানান।
পানি বিজ্ঞানী ড.আইনুন নিশাত জানান, পরিবর্তনজনিত জলবায়ুর কারণে চরের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচেছ। এজন্য চরের মানুষের উন্নয়নে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা। এজন্য তিনি বলেন, চরের জন্য পৃখক বোর্ড গঠন করে বন্যা কবলিত মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরের তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রে ভ্ঙানে ৮০ হাজার পরিবার নদীভ্ঙানে শিকার হয়েছে। নদীভ্ঙানে তীর রক্ষার জন্য সরকার পরিকল্পনা করলেও চরাঞ্চল ভ্ঙান প্রতিরোধে কোন পরিকল্পনা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বন্যা ঝুকিতে থাকা মানুষজন বসতভিটা উচুঁর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপগ্রহণ করবে এমন দাবী বন্যা ঝুঁকিতে থাকা মানুষজনের।