Dhaka ০৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খাল-বিলে পানি নেই, কদর নেই মাছধরা ফাঁদের!

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩
  • ১৯৩ Time View


তোফায়েল হোসেন জাকির, সাদুল্লাপুর:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বর্ষাকালে এ এলাকার চারিদিকে নজর কাড়ে থৈথৈ গলা পানি। এসব পানি ধীরে ধীরে হাটুজলে নেমে আসে। এমন সময়ে মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ বসিয়ে প্রচুর পরিমান ধরা হত নানান প্রজাতির ছোট মাছ। এখন আর দেশি প্রজাতির ছোট মাছগুলো আগের মত তেমন চোখে পড়ে না। এর ফলে মাছ ধরার দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ প্রভৃতি উপকরণের কদর দিনদিন কমে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা, মিরপুর, মহিষবান্দি হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেয়ে বিক্রির অপেক্ষায়। কিন্তু আগের মত তেমন ক্রেতা না থাকায় হাটে বসে অলস সময় পাড় করেছে ওইসব উপকরণ বিক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় গ্রাম বাংলায় বর্ষার নিচু জমি ও খাল-বিল সেচে মাছ ধরা হতো। কিন্তু দুই দশক ধরে অধিকাংশ প্রজাতির দেশীয় হারিয়েছে। যার ফলে চিরায়িত সেই দৃশ্য আগের মতো এখন আর সচরাচর চোখে পড়েনা। তবে আষাঢ় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে কিছুটা রৌদ্র পুড়ে হাঁটু পানিতে মাধ ধরার চিত্র দেখা মেলে। কাদা পানিতে নেমে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার অন্যতম বিনোদনও বটে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি তা বহমান। সেই সময়ে গাইবান্ধা জেলার নদী-নালা, ও খাল-বিল এলাকার তীরে বসবাসকারি মানুষরা জমির আইলের ফাঁকে দারক বা অন্যান্য ফাঁদ বসিয়ে হরেক রকম ছোট ছোট মাছ ধরতো। এমনকি পেশাদার জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খাল-বিল ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। এমন মাছই মানুষের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মিটাতেন। কিন্ত এই এলাকার জলবায়ু পরিবতনের হারিয়ে বসেছে দেশি প্রজাতির ছোট মাছগুলো। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার মিছিল দিন দিন উঠে যাচ্ছে।
মহিষবান্দি এলাকার প্রবীন ব্যক্তি নজরুল ব্যাপারী বলেন, এক সময়ে নদী-নালা ও বিলের হাঁটুপানিতে নেমে কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধসহ সকল বয়সের মানুষরা মাছ ধরার মিছিলে মেতে উঠতো। এখন নদী-নালাগুলো মরা খালে পরিনত হয়েছে। মরা খালের পানিতে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। এ কারণে ছোট মাছ যেন সোনার হরিণ হতে চলেছে। আগের মত অহরহ মাছ পাওয়া যায় না এখানকার খাল-বিলে।
নলডাঙ্গার হাছিনা বেওয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা বলেন, খাল-বিলের পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদ অন্যতম। গোশতের চেয়ে রান্না করা এ মাছ দিয়ে ভাত খেতে অনেকটাই মুখরোচক। কিন্তু ছোট ছোট মাছগুলো কমে যাওয়া সেই রান্নার ঘ্রাণ এখন আর নাকে আসে না।
মিরপুরের আমান উল্লাহ্ জানান, আগে এমনভাবে বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ ধরা গেলেও, এখন আর সেইদিন নেই। হারিয়ে গেছে নানা জাতের মাছ। তাই হাঁটু পানিতে নেমে জমে উঠে না মাছ ধরার উৎসব।
মহিষবান্দি হাটে আসা মাছের উপকরণ বিক্রেতা নওশা মিয়া বলেন, দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ প্রভৃতি উপকরণ নিজে তৈরী করে হাট-বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু এই পেশায় এখন ভাটা পড়ছে। খাল-বিলে দেশিও মাছ তেমন না থাকায় এসব ফাঁদ বিক্রি হচ্ছে কম।
রসুলপুরের পেশাদার জেলে সাদেক আলী বলেন, বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করাই আমার পেশা। ছোট ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা হতো। যা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মিটতো। এখন আর খাল-বিলে এসব মাছ তেমন পাওয়া যায় না। ফলে বাপ-দাদার পেশে ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত আছি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সিরাজাম মুনিরা বলেন, উন্মুক্ত জলাশ্বয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পোনা ধরার ব্যাপারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশি প্রজাতির মাছ প্রজনন বাড়াতে নানান ধরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

খাল-বিলে পানি নেই, কদর নেই মাছধরা ফাঁদের!

Update Time : ১১:৫১:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০২৩


তোফায়েল হোসেন জাকির, সাদুল্লাপুর:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার বর্ষাকালে এ এলাকার চারিদিকে নজর কাড়ে থৈথৈ গলা পানি। এসব পানি ধীরে ধীরে হাটুজলে নেমে আসে। এমন সময়ে মাছ ধরার বিভিন্ন ফাঁদ বসিয়ে প্রচুর পরিমান ধরা হত নানান প্রজাতির ছোট মাছ। এখন আর দেশি প্রজাতির ছোট মাছগুলো আগের মত তেমন চোখে পড়ে না। এর ফলে মাছ ধরার দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ প্রভৃতি উপকরণের কদর দিনদিন কমে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা, মিরপুর, মহিষবান্দি হাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোতে মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেয়ে বিক্রির অপেক্ষায়। কিন্তু আগের মত তেমন ক্রেতা না থাকায় হাটে বসে অলস সময় পাড় করেছে ওইসব উপকরণ বিক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় গ্রাম বাংলায় বর্ষার নিচু জমি ও খাল-বিল সেচে মাছ ধরা হতো। কিন্তু দুই দশক ধরে অধিকাংশ প্রজাতির দেশীয় হারিয়েছে। যার ফলে চিরায়িত সেই দৃশ্য আগের মতো এখন আর সচরাচর চোখে পড়েনা। তবে আষাঢ় শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে কিছুটা রৌদ্র পুড়ে হাঁটু পানিতে মাধ ধরার চিত্র দেখা মেলে। কাদা পানিতে নেমে মাছ ধরা গ্রাম বাংলার অন্যতম বিনোদনও বটে। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি তা বহমান। সেই সময়ে গাইবান্ধা জেলার নদী-নালা, ও খাল-বিল এলাকার তীরে বসবাসকারি মানুষরা জমির আইলের ফাঁকে দারক বা অন্যান্য ফাঁদ বসিয়ে হরেক রকম ছোট ছোট মাছ ধরতো। এমনকি পেশাদার জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খাল-বিল ছিল তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। এমন মাছই মানুষের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা মিটাতেন। কিন্ত এই এলাকার জলবায়ু পরিবতনের হারিয়ে বসেছে দেশি প্রজাতির ছোট মাছগুলো। ফলে বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার মিছিল দিন দিন উঠে যাচ্ছে।
মহিষবান্দি এলাকার প্রবীন ব্যক্তি নজরুল ব্যাপারী বলেন, এক সময়ে নদী-নালা ও বিলের হাঁটুপানিতে নেমে কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধসহ সকল বয়সের মানুষরা মাছ ধরার মিছিলে মেতে উঠতো। এখন নদী-নালাগুলো মরা খালে পরিনত হয়েছে। মরা খালের পানিতে দেশি প্রজাতির মাছের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। এ কারণে ছোট মাছ যেন সোনার হরিণ হতে চলেছে। আগের মত অহরহ মাছ পাওয়া যায় না এখানকার খাল-বিলে।
নলডাঙ্গার হাছিনা বেওয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা বলেন, খাল-বিলের পাঁচ মিশালী মাছের স্বাদ অন্যতম। গোশতের চেয়ে রান্না করা এ মাছ দিয়ে ভাত খেতে অনেকটাই মুখরোচক। কিন্তু ছোট ছোট মাছগুলো কমে যাওয়া সেই রান্নার ঘ্রাণ এখন আর নাকে আসে না।
মিরপুরের আমান উল্লাহ্ জানান, আগে এমনভাবে বিভিন্ন জাতের দেশীয় মাছ ধরা গেলেও, এখন আর সেইদিন নেই। হারিয়ে গেছে নানা জাতের মাছ। তাই হাঁটু পানিতে নেমে জমে উঠে না মাছ ধরার উৎসব।
মহিষবান্দি হাটে আসা মাছের উপকরণ বিক্রেতা নওশা মিয়া বলেন, দারকি, টেপি, পলো, খলাইসহ প্রভৃতি উপকরণ নিজে তৈরী করে হাট-বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু এই পেশায় এখন ভাটা পড়ছে। খাল-বিলে দেশিও মাছ তেমন না থাকায় এসব ফাঁদ বিক্রি হচ্ছে কম।
রসুলপুরের পেশাদার জেলে সাদেক আলী বলেন, বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মাছ শিকার করাই আমার পেশা। ছোট ছোট মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করা হতো। যা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদা মিটতো। এখন আর খাল-বিলে এসব মাছ তেমন পাওয়া যায় না। ফলে বাপ-দাদার পেশে ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত আছি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সিরাজাম মুনিরা বলেন, উন্মুক্ত জলাশ্বয়ে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পোনা ধরার ব্যাপারে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেশি প্রজাতির মাছ প্রজনন বাড়াতে নানান ধরণের চেষ্টা করা হচ্ছে।