লোডশেডিং ভোগান্তি আরো বাড়বে


প্রকাশের সময় : জুন ৪, ২০২৩, ৪:১৯ অপরাহ্ণ / ৫৯৩
লোডশেডিং ভোগান্তি আরো বাড়বে

তীব্র তাপদাহের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং বিপর্যস্ত করে তুলেছে জনজীবন। রাজধানীতে দিনরাত মিলিয়ে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এর চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। সেখানে দিনে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান লোডশেডিং থাকবে জুন মাসজুড়েই। প্রাথমিক জ্বালানি গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেলের সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। বন্ধ আছে বেশ কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ স্বাভাবিক হলে আগামী মাসে লোডশেডিং কমে আসবে। তবে একেবারে বন্ধ হবে, তা বলা যাচ্ছে না।

এদিকে, চলমান লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে শিল্পকারখানা ও কৃষকরা। গ্রামাঞ্চলে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প চলছে না। ফলে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না কৃষকরা। বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দেওয়ার কারণে বেড়ে যাচ্ছে চাষের খরচ। অন্যদিকে, শিল্পকারখানাগুলোতে এমনিতেই গ্যাসের সংকট তীব্র। তারও পর লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকে। এ ছাড়া চিকিৎসাসেবা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।

গতকাল শনিবার দুপুরে সাভারে একটি অনুষ্ঠান শেষে চলমান লোডশেডিং নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান বিপু। তিনি বলেন, কয়েকটি পাওয়ার প্লান্ট বন্ধ থাকায় লোডশেডিং বেড়েছে। কিছুদিন এ পরিস্থিতি চলবে। কয়লার অভাবে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র (পায়রা) অর্ধেক বন্ধ অবস্থায় আছে। ৫ তারিখের পর বাকি অর্ধেকও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে সিস্টেমে একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ না পাওয়ায় কিছুটা জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের ওপরে লোডশেডিং চলছে বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে চাহিদার বিপরীতে ১৪ হাজার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি প্রায় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার মেগাওয়াট। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এখন ২৩ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুতে গ্যাসের সরবরাহও আগের চেয়ে কমেছে। মূলত ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানি বিঘ্নিত হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে মাস দুয়েক সময় লাগবে।

পায়রা বন্ধে ভোগান্তি আরও বাড়বে

সংশ্লিষ্টরা জানান, পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধে লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি আরও বাড়বে। কারণ হিসেবে জানান, দেশের সবচেয়ে বড় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এটি। এ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মিটিয়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো রাজধানীতে। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, বাড়বে লোডশেডিং। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কয়লা সংকটের কারণে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট গত ২৫ মে বন্ধ হয়ে যায়। অন্য ইউনিটটি বন্ধের পথে।

কেন্দ্রটির প্লান্ট ম্যানেজার শাহ আব্দুল মাওলা কালবেলাকে বলেন, রোববার রাতের যে কোনো সময় কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এরই মধ্যে কয়লা আমদানির ঋণপত্র খুলতে বলেছি। চলতি মাসের শেষ নাগাদ কয়লা এলে ফের এটি চালু হবে। তিনি বলেন, ডলার সংকটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ১০ জাহাজ কয়লা আনার ঋণপত্র খোলার কাজ চলছে। প্রতিটি জাহাজে থাকবে ৪০ হাজার টন কয়লা। প্রথম জাহাজ আসবে এ মাসের ২৫-২৬ তারিখে। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজার টন কয়লা লাগে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হয় এ কয়লা। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য কয়লা কিনতে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। সর্বশেষ ১০০ মিরিয়ন ডলার পরিশোধ করার পর ফের কয়লা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিএমসি।

এদিকে, পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গতকাল শনিবার বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার ২৩০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর চাহিদা ছিল ২ হাজার ১৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাসের অভাবে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০টি কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিল পরিশোধ করতে না পারায় উদ্যোক্তারা জ্বালানি তেলও আমদানি করতে পারছে না। এ কারণে ফার্নেস অয়েল থেকে কমবেশি দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। যেখানে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক ৪ হাজার মেগাওয়াটি উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অনুসারে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের পাওনা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে ৫০টি কেন্দ্রের উৎপাদন কম হচ্ছে।

পিডিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গতকাল সারা দেশে ১ হাজার ১৭৭ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ২৭০, চট্টগ্রামে ১২৪, খুলনায় ১৬০, কুমিল্লায় ১৯০, ময়মনসিংহে ১৮১, সিলেটে ১৩৭, বরিশাল ৪৩ ও রংপুরে ৭২ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে।