ভাঙছে স্থায়ী চর,প্রতিরোধে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা


প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০২৩, ১:২৮ অপরাহ্ণ / ১২১
ভাঙছে স্থায়ী চর,প্রতিরোধে প্রয়োজন স্থায়ী পরিকল্পনা

আফতাব হোসেন:

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বাজে ফুলছড়ি গ্রামের নুর ইসলাম মিয়া। বয়স ৫০ বছর। তার জন্ম এই চরেই। নুর ইসলামের বাবা ও দাদারও বেড়ে ওঠা এই চরে। প্রায় শত বছর আগে গড়ে উঠেছে এই চর গ্রামটি। কিন্তু গত তিন বছরে যমুনার ভ্্াঙনে বিলীনের পথে এই গ্রামটি। ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে গেছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বেশ কয়েকটি অবকাঠামো। গত দু বছরের বসতভিটা হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বাজে ফুলছড়ি, পিপুলিয়া, টেংরাকান্দি, পারুল চরের অন্ততপক্ষে ৫ হাজার পরিবারের ১৫ মানুষ। একই চিত্র গাইবান্ধা সদর উপজেলার চর কুন্দেরপাড়া গ্রামে। ১৯৯৩ সালে জেগে ওঠে এই চরটি। এরপর বসতি থেকে শুরু করে, প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ক্লিনিক, আশ্রয় কেন্দ্র, হাটবাজার স্থাপিত হয়। বিদ্যুৎ সুবিধা পায় এই এলাকার মানুষজন। কিন্তু ৩০ বছরের এই চরটিও নদীভ্ঙানে শেষ প্রান্তে। ক্রমাগত ভাঙনে সবকিছু বিলীন হলেও প্রতিরোধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
একটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর নদীভ্ঙানে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলায় তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভ্ঙানে স্থানান্তরিত হয় প্রায় ১০ মানুষ। ৬ হাজার হেক্টর জমি আবাদি জমি অনাবাদি হয়। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো ও সম্পদ। অনিশ্চিত হয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর পড়ালেখা।
কুন্দেরপাড়া নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, কুন্দেরপাড়াকে গাইবান্ধা চরের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। এই চরের নাগরিক সুবিধার সবকিছুই ছিল। কিন্তু গত ৫ বছরের ভ্ঙানে কুন্দেরপাড়া, খারজানি, বাটিকামারী আরো কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়েছে। চরের একমাত্র নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে দু’বছরের দু’বার সরাতে হয়েছে। কামারজানি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সালাম জানান, চরের মানুষজনের জীবনমান ও সম্পদ রক্ষায় প্রশাসনের দৃষ্টি ও পদক্ষেপ নেই। অসহায় মানুষজন ভাঙনে সামান্য ক্ষতিপূরণ পেলেও স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কোন ধরণের সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করে। কুন্দেরপাড়ার ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন, বলেন চরের মানুষজন সবসময় চিন্তা নিয়ে ঘুমাতে হয়। নদীভ্ঙানের ভয়ে বাড়ি গাছপালা লাগাতে পারে না।
নদী গবেষক ও গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, চরের মানুষজনের জীবনমানের উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা নদীভ্ঙান। দীর্ঘদিনের স্থায়ী চরগুলো নদীভ্ঙানে বিলীন হচ্ছে। এতে করে প্রভাব পড়ছে জীবন জীবিকায়। এজন্য তিনি স্থায়ী চরগুলোকে রক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা নেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো, অলিউর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার টেকসই উন্নয়নে কাজ করছে। নদী ও চর মানুষের সম্পদ। চরের মানুষজনের জীবনমান উন্নয়নে টেকসই পরিকল্পনার প্রস্তাবনা মন্ত্রনালয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আশাবাদী চর রক্ষায় সরকার দ্রুতই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
গাইবান্ধা-৫(ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ হাসান রিপন জানান যুমনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলগুলোকে নদীভাঙন থেকে রক্ষায় গবেষণা চলছে। বর্তমান সরকার প্রত্যেক নাগরিকের জীবনমানের উন্নয়নে বিশেষ করে চরাঞ্চলগুলোকে ভ্ঙানের কবল থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান মন্ডল জানান, মেইনল্যান্ডের মত চরাঞ্চলগুলোকে রক্ষা করতে অস্থায়ী ও স্থায়ী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ না করলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন ব্যাহত হবে। একারণে চরাঞ্চলের মানুষজনের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করার দাবী চরবাসীর।