
সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পরিকল্পিত অপহরণের শিকার ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী ৩ মাসেও উদ্ধার হয়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বাদী ও স্বাক্ষীরা।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় উপজেলার শোভাগঞ্জ কলেজ মোড় থেকে অপহরণের শিকার ঐ ছাত্রীকে প্রতিবেশী ররনজিনা আক্তার ছোট ভাই কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে ফাঁকি দিয়ে কলেজ মোড়ে ডেকে আনে। সেখানে আগে থেকেই অটোবাইক (মিশুক) গাড়ি নিয়ে ওঁৎপেতে থাকা অপহরণকারী চক্রের ৮ সদস্য জোড়পূর্বক স্কুলছাত্রীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পরবর্তী ১৯ ফেব্রুয়ারী অপহৃতার পিতা সংশ্লিষ্ট আইনে থানায় মামলা করেন। ঘটনার ৩ মাসেও অপহৃত স্কুলছাত্রী উদ্ধার হয়নি। এমনকি, মামলার বর্ণিত আসামী, অজ্ঞাতনামা আসামীসহ জড়িতদের গ্রেপ্তারেও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীনের সীমাহীন গড়িমসি চলছে। অপহরণকারীরা বিশেষ সখ্যতার বিনিময়ে অপহৃতাকে দীর্ঘদিন ধরে নানা স্থানে জোড়পূর্বক আটকে রেখে বিভিন্ন কাগজে সহি-স্বাক্ষর গ্রহণ, লেখিত বক্তব্য পাঠে বাধ্য করে তা আবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়াছড়ি করছে। তাদের কথা না মেনে অপহৃতা বাবা-মায়ের কাছে যেতে চাওয়ায় তাকে নির্যাতন করছে। একপর্যায়ে অপহৃতাকে হত্যা করারও উদ্যোত হয়। এদিকে, অপহৃতার নামীয় মূল্যবান জমি-জমা অপহৃতার পিতার পরিবারের প্রতিপক্ষ ও অপহরণ ঘটনার মূলপরিকল্পনাকারী আঃ খালেক ওরফে সাইদুরের নামে দলিল করে দেয়ার জন্য চাপসৃষ্টি করছে। অপরদিকে, মামলার আইও’র সঙ্গে সখ্যতা গড়ায় মূল পরিকল্পনাকারী, অপহরণ ও অন্যান্য ঘটনায় জড়িতরা মামলা তুলে নেয়ার জন্য বাদীকে কঠোরভাবে চাপসৃষ্ট করছে। স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য স্বাক্ষীদেরকেও হুমকী দিচ্ছে। শুধু তাই না; বাদী, স্বাক্ষী ও তাদের পরিবারের প্রতি নানান ষড়যন্ত্রও করছে। এ পর্যন্ত কয়েকদফা হামলা করার চেষ্টায়ও চালিয়েছে। তাছাড়া, বাদী ও স্বাক্ষীদের বিরুদ্ধে আসামী রনজিনার পিতা রনজু মিয়া থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে হয়রাণী করছে। চাক্ষুষ এ অপহরণের ঘটনাকে প্রভাবশালী আসামীরা প্রেমঘটিত ঘটনা বলে চালাতে মরিয়া হয়ে লেগেছে। ঘটনায় জড়িতরা প্রকাশ্য নিজ নিজ বাড়িতে কাজকর্ম করতে থাকলেও গ্রেপ্তার হচ্ছেনা। অনেক বলার পর গত ২৬ এপ্রিল দুপুরে রনজিনা নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর তার অনলাইন জন্ম ও শিক্ষা সনদের প্রেক্ষিতে ১৮ বছর ৪ মাস বয়স উল্লেখ না করে রনজিনার পিতার জালিয়াতিমূলক সৃজনকৃত কম বয়সী জন্মসনদ দেখানোকে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রাধান্য দেয়ায় আসামীকে শিশু বিবেচনায় বিজ্ঞ আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। এতে রনজিনার ৩টি মোবাইল সীমের কল তালিকা, ইমো, ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসএ্যাপে অপহরণের যোগসূত্র ও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ না করায় তথ্যচিত্রকে হত্যা করা হয়েছে বাদী ধারনা করছেন।
এদিকে, রনজিনার পিতা রনজু, অপহরণে মূল পরিকল্পনাকারী সাইদুর তাদের পরিবারসহ দলবল নিয়ে বাদী ও স্বাক্ষীদের প্রতি নানান হুমকী প্রদানসহ ষড়যন্ত্র করছে।
এব্যাপারে, অপহৃত স্কুলছাত্রীর পিতা মামলার বাদী বলেন, মেয়েকে উদ্ধারে পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকার আর অন্যান্য বিষয়ে পরে জানানো হবে। আগে অপহৃত মেয়েকে উদ্ধার করা দরকার। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করছি, দেখাও করছি। বর্তমানে স্বাক্ষীরা তাদের পরিবার ও আমার পরিবার-পরিজনসহ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।অপহরণ ঘটনা ও অপহৃতার নামীয় জমি লিখে নেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী আঃ খালেক ওরফে সাইদুর স্থানীয়ভাবে তিরস্কার করে বলছে- ‘মেয়েকে সে না-কি বিয়ে দিয়ে দিয়েছে’।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমীন বলেন, আসামীদেরকে পাওয়া যাচ্ছেনা। তারা মোবাইলফোন ব্যবহার করেনা। প্রযুক্তিগত দিক থেকে সংযোগ মিলছেনা ইত্যাদি।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, অপহৃতা উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।