Dhaka ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুরের মূর্ছনায় দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ছিল সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের তিস্তা নদীর পাড়

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৩০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ২৫ Time View

স্টাফ রিপোর্ট ঃ ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’—এই স্লোগানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ছিল হরিপুরের তিস্তা নদীর পাড়। আন্দোলনকারীরা পালাগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের সুরে তুলে ধরছেন তাদের আকুতি—‘তিস্তা বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’।
গতকাল মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। সকাল থেকেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টসহ ১১টি স্থানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তিস্তা বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
সংগীতের শক্তিকে আন্দোলনের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যমও বটে। আমরা গানের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনার কথা তুলে ধরছি, যেন সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে টানা ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সুরের মূর্ছনার পাশাপাশি চলছে আলোচনা সভা। এতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের জীবন-জীবিকার অংশ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখি, তিস্তা শুকিয়ে যাচ্ছে, কৃষকরা চাষা-আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালানোর কাজ হারাচ্ছেন। তাই আমরা ন্যায্য পানির দাবিতে মাঠে নেমেছি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত। তারা বর্ষায় বন্যায় সর্বস্ব হারায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়ে। অথচ সরকার একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা তিস্তা পাড়ের মানুষের এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি এবং তাদের পাশে আছি।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, কৃষি ও সংস্কৃতির অংশ। ভারত একতরফাভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তাপাড়ের মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অথচ সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে তিস্তা পাড়ের মানুষ বঞ্চনার বিরুদ্ধে গানের সুর তুলেছে। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের পাশাপাশি গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা আন্দোলনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাদের দাবি, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচি নেয়া হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

kartick kartick

Popular Post

সুরের মূর্ছনায় দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ছিল সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের তিস্তা নদীর পাড়

Update Time : ০৭:৩০:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

স্টাফ রিপোর্ট ঃ ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’—এই স্লোগানে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও উত্তাল ছিল হরিপুরের তিস্তা নদীর পাড়। আন্দোলনকারীরা পালাগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের সুরে তুলে ধরছেন তাদের আকুতি—‘তিস্তা বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’।
গতকাল মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে আন্দোলন আরও বেগবান হয়েছে। সকাল থেকেই গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টসহ ১১টি স্থানে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছেন। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে তিস্তা বাঁচানোর বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা।
সংগীতের শক্তিকে আন্দোলনের ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার বিষয়ে আন্দোলনকারীরা জানান, সংগীত শুধু বিনোদন নয়, এটি প্রতিবাদের শক্তিশালী মাধ্যমও বটে। আমরা গানের মাধ্যমে তিস্তা পাড়ের দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনার কথা তুলে ধরছি, যেন সবার হৃদয়ে নাড়া দেয়।’
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে টানা ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সুরের মূর্ছনার পাশাপাশি চলছে আলোচনা সভা। এতে তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, তিস্তা শুধু নদী নয়, এটি আমাদের জীবন-জীবিকার অংশ। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখি, তিস্তা শুকিয়ে যাচ্ছে, কৃষকরা চাষা-আবাদ করতে পারছেন না, জেলেরা মাছ পাচ্ছেন না, মাঝিরা নৌকা চালানোর কাজ হারাচ্ছেন। তাই আমরা ন্যায্য পানির দাবিতে মাঠে নেমেছি।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোজাহারুল ইসলাম বলেন, তিস্তা পাড়ের মানুষ বছরের পর বছর ধরে অবহেলিত। তারা বর্ষায় বন্যায় সর্বস্ব হারায়, শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে দুর্ভোগে পড়ে। অথচ সরকার একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা তিস্তা পাড়ের মানুষের এই আন্দোলনকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করি এবং তাদের পাশে আছি।
গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়, এটি উত্তরবঙ্গের মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, কৃষি ও সংস্কৃতির অংশ। ভারত একতরফাভাবে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা শুকিয়ে যায়, বর্ষায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তাপাড়ের মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। অথচ সরকার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা মনে করি, তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।
আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে তিস্তা পাড়ের মানুষ বঞ্চনার বিরুদ্ধে গানের সুর তুলেছে। পালাগান, সারিগান, ভাওয়াইয়া ও লোকসংগীতের পাশাপাশি গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়েছে। হা-ডু-ডু, ঘুড়ি উড়ানো, গোল্লাছুট ও দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা আন্দোলনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে।
আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানান, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া এই দুর্ভোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাদের দাবি, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে বৃহত্তর কর্মসূচি নেয়া হবে।