Dhaka ০৩:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাদুল্লাপুরে নানা কারণে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:১২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩৬ Time View

 

তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ কছিমন বেওয়া, ছকিনা বেওয়া, আব্দুল কাদের ও ফুলিমাই বেওয়া। এদের মধ্যে কেউ কেউ বয়স্ক-বিধবা, কেউবা প্রতিবন্ধী। তারা দরিদ্র্যতার ধাক্কায় দলবেঁধে নেমেছেন ভিক্ষবৃত্তিতে। সকাল হলেই ছুটছেন গ্রাম থেকে শহরে। জীবিকার সংগ্রামে হাত পাতছেন বাসা-বাড়ি ও পথচারিদের কাছে। শুধু কছিমন বেওয়ারা নন। এমন অসংখ্যা ভিক্ষুকের জটলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাদুল্লাপুরবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর, চৌমাথা মোড়সহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এবং জনাকীর্ণ এলাকায় হাত পাতছেন দলে দলে ভিক্ষুক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রব্যমূল্য অগ্নিমূল্যসহ নানা কারণে দরিদ্র্য পরিবারে বেড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এছাড়া শারিরীক অক্ষমতা, পঙ্গত্ববরণ, বিধবা হওয়া, অসুস্থ স্বজনের চিকিৎসাসেবা, মেয়েকে পাত্রস্থ ও সন্তানদের কাছে বিতারিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন তারা। তাদের কেউ বলেছেন অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসাসেবা, রোগাক্রান্তে পঙ্গত্ববরণে ভিক্ষুক সেজেছেন। কেউবা জানিয়েছেন স্বামী মারা গেছেন, সন্তানেরা দেখেন না, আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়ায় বেঁছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। আবার অনেকে বানিজ্যিক হিসেবেও এই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ফুলিমাই বেওয়া (৬০) নামের এক ভিক্ষুক জানালেন, নানা অভাব-অনটনের সংসার তার। একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এরই মধ্যে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছেন। তাই পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টায় অন্যের কাছে হাত পাতছেন তিনি। কছিমন বেওয়া (৫৩) নামের আরেক ভিক্ষুক বলেন, এক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলের সংসার তেমন চলে না। তাই নিজেকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হচ্ছে। ছকিনা বেওয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা জানালেন, তার নিজস্ব জায়াগা জমি কিছুই নেই। অন্যেরর বাড়িতে বসবাস। ছেলে তেমন খোঁজখবর রাখেন না। আর সবকিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এতে করে ব্যয়ভার সামাল দিতে ভিক্ষা করেই স্ত্রীকে নিয়ে জীবন পার করছেন।
আলম মিয়াসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আগের তুলনায় ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বিশেষ করে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার দিনব্যাপী ভিক্ষুকের ভির লেগেই থাকে। তাদের আনাগোনায় অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।
সাদুল্লাপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি বলেন, সমাজ থেকে ভিক্ষুক হ্রাস কল্পে প্রথমত: প্রতিবেশীদের সহানুভূতি হতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি বরাদ্দের সুবিধাগুলো জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সুষম বন্টন অবশ্যক।
সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শতাধিক নারী-পুরুষকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এ কার্যক্রম চলমান আবারও চালানো হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

kartick kartick

Popular Post

সাদুল্লাপুরে নানা কারণে বাড়ছে ভিক্ষুকের সংখ্যা

Update Time : ০৮:১২:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ কছিমন বেওয়া, ছকিনা বেওয়া, আব্দুল কাদের ও ফুলিমাই বেওয়া। এদের মধ্যে কেউ কেউ বয়স্ক-বিধবা, কেউবা প্রতিবন্ধী। তারা দরিদ্র্যতার ধাক্কায় দলবেঁধে নেমেছেন ভিক্ষবৃত্তিতে। সকাল হলেই ছুটছেন গ্রাম থেকে শহরে। জীবিকার সংগ্রামে হাত পাতছেন বাসা-বাড়ি ও পথচারিদের কাছে। শুধু কছিমন বেওয়ারা নন। এমন অসংখ্যা ভিক্ষুকের জটলায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাদুল্লাপুরবাসী।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর, চৌমাথা মোড়সহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এবং জনাকীর্ণ এলাকায় হাত পাতছেন দলে দলে ভিক্ষুক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্রব্যমূল্য অগ্নিমূল্যসহ নানা কারণে দরিদ্র্য পরিবারে বেড়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এছাড়া শারিরীক অক্ষমতা, পঙ্গত্ববরণ, বিধবা হওয়া, অসুস্থ স্বজনের চিকিৎসাসেবা, মেয়েকে পাত্রস্থ ও সন্তানদের কাছে বিতারিত হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন তারা। তাদের কেউ বলেছেন অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসাসেবা, রোগাক্রান্তে পঙ্গত্ববরণে ভিক্ষুক সেজেছেন। কেউবা জানিয়েছেন স্বামী মারা গেছেন, সন্তানেরা দেখেন না, আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রায় ব্যয় বাড়ায় বেঁছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। আবার অনেকে বানিজ্যিক হিসেবেও এই কাজটি করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ফুলিমাই বেওয়া (৬০) নামের এক ভিক্ষুক জানালেন, নানা অভাব-অনটনের সংসার তার। একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এরই মধ্যে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছেন। তাই পরিবারের চাহিদা পূরণের চেষ্টায় অন্যের কাছে হাত পাতছেন তিনি। কছিমন বেওয়া (৫৩) নামের আরেক ভিক্ষুক বলেন, এক বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলের সংসার তেমন চলে না। তাই নিজেকে ভিক্ষাবৃত্তি করতে হচ্ছে। ছকিনা বেওয়া (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা জানালেন, তার নিজস্ব জায়াগা জমি কিছুই নেই। অন্যেরর বাড়িতে বসবাস। ছেলে তেমন খোঁজখবর রাখেন না। আর সবকিছু পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এতে করে ব্যয়ভার সামাল দিতে ভিক্ষা করেই স্ত্রীকে নিয়ে জীবন পার করছেন।
আলম মিয়াসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আগের তুলনায় ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। বিশেষ করে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার দিনব্যাপী ভিক্ষুকের ভির লেগেই থাকে। তাদের আনাগোনায় অতিষ্ট সাধারণ মানুষ।
সাদুল্লাপুর বাজার বনিক সমিতির সভাপতি বলেন, সমাজ থেকে ভিক্ষুক হ্রাস কল্পে প্রথমত: প্রতিবেশীদের সহানুভূতি হতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারি বরাদ্দের সুবিধাগুলো জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সুষম বন্টন অবশ্যক।
সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শতাধিক নারী-পুরুষকে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এ কার্যক্রম চলমান আবারও চালানো হবে।