
তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ বৃদ্ধা ছকিনা বেওয়া। বয়স ৭৫ বছর ছুঁইছুঁই। অনেক আগে হারান স্বামীকে। নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। যেখানে রাত সেখানেই কাত। পেশা তার ভিক্ষাবৃত্তি। বয়সের ভারে হয়েছেন কুঁজো। নানা রোগে বাসা বেঁধেছে শরীরে। তবুও জীবিকার সন্ধানে নিরন্তর ছুটে চলা। যেন পায়ে তার বাহন। সকাল-সন্ধ্যা ঘুড়ে বেড়ান অন্যের দুয়ার-দুয়ারে। আজও কপালে জোটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতাদি। পান না কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধাও। ফলে জীবন-জীবিকার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকা এই বৃদ্ধার।
অসহায় ছকিনা বেওয়ার অস্থায়ী বসবাস গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের ইসবপুর (পুর্বপাড়া) গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়িতে। এখানকার মৃত মেছের আলীর স্ত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছকিনা বেওয়ার স্বামী পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। ছিলো না তার জায়গা জমি। দাম্পত্য জীবনে প্রথম ছেলে সৈয়দ আলীর বয়স যখন ৫ বছর তখন ফের তার গর্ভে থাকা আরেক সন্তান রেখে মেছের আলী মারা যায়। এরপর জীবনে নেমে আসে কালমেঘ। দুই শিশু সন্তান সৈয়দ আলী ও রানজুকে বাঁচাতে ছকিনা বেওয়া বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি পেশা। আর বসবাস করেন প্রতিবেশীদের বাড়িতে। এভাবে স্বামী মৃত্যুর ৪০ বছর ধরে জীবন-জীবিকার লড়াই করে চলছেন এই বৃদ্ধা। এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন। দুই ছেলে থাকেন জেলার বাহিরে। তাদেরও অভাব-অনটনের সংসার। কেউ খোঁজ রাখে না ছকিনার। যে বয়সে আরাম আয়েশে থাকার কথা, ঠিক সেই বয়সে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। রাতযাপন করছেন অন্যের বাড়ি-বাড়ি। চরম দুর্বিষহ জীবন কাটছে তার। শেষ বয়সেও ছকিনা বেওয়া তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে রোজগারের আশায় ছুটছেন বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে।
বৃদ্ধা ছকিনা বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন- আমার স্বামী কয়েক যুগ আগে মারা গেছে। তখন থেকে ভিক্ষা করে খাই। নিজের জমি ও ঘর নেই। অন্যের বাড়িতে থাকতে হয়। সরকার যদি আমাকে একটি ঘর ও ভাতা করে দিতো তাহলে হয়তো শেষকালে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম।
আব্দুর রশিদ মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, ছকিনা বেওয়ার কোন জায়াগা জমি নেই। বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে বসবাস তার। বর্তমানে আমার বাড়িতে রাত্রীযাপন করছেন তিনি।
অসহায় এই ছকিনার কষ্টের শেষ নেই। জনপ্রতিনিধিদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তার জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগীতা দরকার বলে জানালেন মোসলেম আলী নামের এক শিক্ষক।
ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রনজু মিয়া- ছকিনা বেওয়ার এনআইডি কার্ড নেই। এ জন্য তিনি সহজে সরকারি সুবিধাদি পাচ্ছেন না।
ফরিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মামুন মন্ডল মিলন, ওই নারীর এতোটা করুণ অবস্থা সেটি জানা ছিলো না। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগীতা করা হবে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, ছকিনা বেওয়ার তথ্য আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। তিনি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্য। তৃতীয় কিস্তিতে তাকে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওয়তায় নিয়ে আসবো।