Dhaka ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মজুরি বৈষম্যে নারী শ্রমিক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:৩২:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৬২ Time View

তোফায়েল হোসেন জাকির:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর নলড্ঙ্গাা দশালিয়া গ্রামের নার্গিস বেগম। স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরী দিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি মৌসুমভিত্তিক কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এখন কাজ করছেন বোরো রোপন শ্রমিক হিসেবে। পুরুষ শ্রমিকদের সাথে তিনি সমভাবে মাঠে কাজ করছেন, তবে, দিন শেষে সমমজুরি পাচ্ছেন না। পুরুষের চেয়ে ২শ টাকা কম দেয়া তাকে। দিন শেষে যা-পাচ্ছেন তা নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট এই নারী শ্রমিক। নার্গিস বেগমের মতো সকল নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে একই ধরণের বৈষম্য করা হয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধান ক্ষেত এখন গাঢ় সবুজের বিপ্লব। এখন চারিদিকে নজর কাড়ছে সবুজের সমাহার। আর এসব ক্ষেত থেকে অধিক ফলন পাবার আশায় ইতোমধ্যে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। তবে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে নারী শ্রমিকদের অভিযোগ। যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ৫শ টাকা সেখানে নারী শ্রমিকদের হাতে দেওয়া হচ্ছে ৩শ টাকা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সাদুল্লাপুর উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের বোরোধান ক্ষেতগুলো পরিচর্যাসহ সার-কীটনাশক প্রয়োগে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। আর স্বল্প মজুরি দিতে কৃষকরা নিচ্ছেন নারী শ্রমিকদের।
সাদুল্যাপুরের ধাপের হাটের কৃষক লাভলু প্রামানিক জানান, মালিকেরা সবসময় কম দিয়েই কাজ তুলে নিতে চায়। যদি কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বেশি দিয়ে শ্রমিক নেয়ার প্রয়োজন কি? কামারপাড়া গ্রামের গৃহস্থ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে কাজ একটু কম করে এজন্য কম মজুরী দেওয়া হয়। তবে, পুরুষের চেয়ে নারীরা কাজ কম করে এমন কথা মানতে নারাজ রসুলপুর গ্রামের শ্রমিক ফুলমতি বেওয়া। তিনি উল্টো বলেন পুরুষেরা বিড়ি খাওয়াসহ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপন করেন কিন্তু নারীরা তা করে না। স্থানীয় কৃষক আজিবর রহমান বলেন, গত বছরের ক্ষতির পুষিয়ে নিতে এবছর দুই একর জমিতে ইরি ধান আবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিক মজুরী ব্যয় বেশির কারণে লোকসানের আশংকায় থাকতে হয়।
নারী নেত্রী রিক্ত প্রসাদ জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য কমলেও মাঠ পর্যায়ে এখন বিরজমান আছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্তি কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুব আলম বসুনিয়া জানান, পুরুষের সাথে নারী শ্রমিক মাঠে কাজ করায় কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন, তবে নারী পুরষের মধ্যে মজুরী বৈষম্য বিষয় থাকা উচিত নয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সাদুল্লাপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর। আর গত বছরের অর্জিত ১৫ হাজার ৯২০ হেক্টর।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

মজুরি বৈষম্যে নারী শ্রমিক

Update Time : ০৩:৩২:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

তোফায়েল হোসেন জাকির:
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর নলড্ঙ্গাা দশালিয়া গ্রামের নার্গিস বেগম। স্বামী থেকে বিচ্ছিন্ন থাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরী দিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। তিনি মৌসুমভিত্তিক কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এখন কাজ করছেন বোরো রোপন শ্রমিক হিসেবে। পুরুষ শ্রমিকদের সাথে তিনি সমভাবে মাঠে কাজ করছেন, তবে, দিন শেষে সমমজুরি পাচ্ছেন না। পুরুষের চেয়ে ২শ টাকা কম দেয়া তাকে। দিন শেষে যা-পাচ্ছেন তা নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট এই নারী শ্রমিক। নার্গিস বেগমের মতো সকল নারী শ্রমিকের ক্ষেত্রে একই ধরণের বৈষম্য করা হয়।
সাদুল্লাপুর উপজেলার বিস্তৃর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধান ক্ষেত এখন গাঢ় সবুজের বিপ্লব। এখন চারিদিকে নজর কাড়ছে সবুজের সমাহার। আর এসব ক্ষেত থেকে অধিক ফলন পাবার আশায় ইতোমধ্যে পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। তবে মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে নারী শ্রমিকদের অভিযোগ। যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন ৫শ টাকা সেখানে নারী শ্রমিকদের হাতে দেওয়া হচ্ছে ৩শ টাকা।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সাদুল্লাপুর উপজেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা তাদের বোরোধান ক্ষেতগুলো পরিচর্যাসহ সার-কীটনাশক প্রয়োগে চরম ব্যস্ত সময় পার করছেন। যেন দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। আর স্বল্প মজুরি দিতে কৃষকরা নিচ্ছেন নারী শ্রমিকদের।
সাদুল্যাপুরের ধাপের হাটের কৃষক লাভলু প্রামানিক জানান, মালিকেরা সবসময় কম দিয়েই কাজ তুলে নিতে চায়। যদি কম মূল্যে শ্রমিক পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে বেশি দিয়ে শ্রমিক নেয়ার প্রয়োজন কি? কামারপাড়া গ্রামের গৃহস্থ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নারীরা পুরুষের চেয়ে কাজ একটু কম করে এজন্য কম মজুরী দেওয়া হয়। তবে, পুরুষের চেয়ে নারীরা কাজ কম করে এমন কথা মানতে নারাজ রসুলপুর গ্রামের শ্রমিক ফুলমতি বেওয়া। তিনি উল্টো বলেন পুরুষেরা বিড়ি খাওয়াসহ নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপন করেন কিন্তু নারীরা তা করে না। স্থানীয় কৃষক আজিবর রহমান বলেন, গত বছরের ক্ষতির পুষিয়ে নিতে এবছর দুই একর জমিতে ইরি ধান আবাদ করা হয়েছে। ফলনও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শ্রমিক মজুরী ব্যয় বেশির কারণে লোকসানের আশংকায় থাকতে হয়।
নারী নেত্রী রিক্ত প্রসাদ জানান, রাষ্ট্রীয়ভাবে অনেক ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বৈষম্য কমলেও মাঠ পর্যায়ে এখন বিরজমান আছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্তি কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবুব আলম বসুনিয়া জানান, পুরুষের সাথে নারী শ্রমিক মাঠে কাজ করায় কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন, তবে নারী পুরষের মধ্যে মজুরী বৈষম্য বিষয় থাকা উচিত নয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
সাদুল্লাপুর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ১৫ হাজার ৬১৬ হেক্টর। আর গত বছরের অর্জিত ১৫ হাজার ৯২০ হেক্টর।