Dhaka ০৬:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বোরো চাষে খরচ বেশি, ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৪০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫
  • ৪২ Time View

স্টাফ রিপোর্টঃ সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে বোরো ধান চাষে খরচ বাড়ছে।
এ মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, বোরো চাষে খরচ বাড়ছে। কিন্তু মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে তাঁদের উৎপাদন খরচ উঠবে না। সরকারি সংগ্রহ অভিযানে ধান-চালের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৯৩ ভাগ অর্থ্যাৎ ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টরের বেশি।
সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে ব্যস্ত। আবার কেউ খেত থেকে আলু তুলে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এসময় শ্রমিক সংকটও রয়েছে, মজুরিও বেশি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি। গত বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি বীজ ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া সার খরচ ২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। একই সঙ্গে কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণের মজুরি ৬০০ থেকে বেড়ে ৮০০- ১ হাজার হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক খরচ রয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের নশরৎপুর এলাকার বাসিন্দা বাবলা মিয়া বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার সেচ খরচ বেশি পড়ছে। এ ছাড়া বীজসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।
উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহাটা গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, এ বছর প্রায় ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধান চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। গত বছর প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানি নিতে খরচ পড়ত ১০০-১১০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ঘণ্টাপ্রতি ১৫০-১৬০ টাকা। এ ছাড়া সার কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে, কীটনাশক ও বীজের দামও বেড়েছে।
দশানি এলাকার কৃষক নূর আক্তার হোসেন বলেন, মজুরি বেশি তাই পরিবারের মা-স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই পরিচর্যা করছি। তবুও খরচ বেশি। একই কথা ওই এলাকার জাহিদুল ইসলাম সরকার। তিনি একাই নিড়ানি দিচ্ছেন।
একই উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের হাটলক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা কামল হোসেন। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, বোরো ধান চাষাবাদের সঙ্গে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। আর তাই ধান উৎপাদনেও খরচ বাড়ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বোরো চাষে অতিরিক্ত সেচ লাগে। খরচ কমাতে কৃষকদের পরিমিত সেচ এবং নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য মনজুর আলম মিঠু বলেন, মৌসুম শেষে ধানের উপযুক্ত দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে কৃষক। এ জন্য সরকারিভাবে ধান-চালের বাজার তদারকিসহ এর সংগ্রহ অভিযান জোরদার করতে হবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

kartick kartick

Popular Post

বোরো চাষে খরচ বেশি, ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

Update Time : ০৬:৪০:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টঃ সেচযন্ত্রের জ্বালানি ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এছাড়া বেড়েছে সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি। এতে বোরো ধান চাষে খরচ বাড়ছে।
এ মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো ধান চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বাড়তি পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা। কৃষকেরা বলছেন, বোরো চাষে খরচ বাড়ছে। কিন্তু মৌসুম শেষে ধানের বাড়তি দাম না পেলে তাঁদের উৎপাদন খরচ উঠবে না। সরকারি সংগ্রহ অভিযানে ধান-চালের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে গাইবান্ধায় বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত রোপণ হয়েছে ৯৩ ভাগ অর্থ্যাৎ ১ লাখ ২১ হাজার হেক্টরের বেশি।
সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বোরো ধানের চারা রোপণ করতে ব্যস্ত। আবার কেউ খেত থেকে আলু তুলে বোরো ধান রোপণের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এসময় শ্রমিক সংকটও রয়েছে, মজুরিও বেশি।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বোরো উৎপাদনের খরচ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর এ বছর তা দাঁড়াবে ১৮ হাজারেরও বেশি। গত বোরো মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে সেচের খরচ ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি বীজ ছিল ২০০ টাকা, এবার তা হয়েছে ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া সার খরচ ২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। একই সঙ্গে কীটনাশক ৬০০ থেকে বেড়ে ১ হাজার টাকা, ধান রোপণের মজুরি ৬০০ থেকে বেড়ে ৮০০- ১ হাজার হয়েছে। এ ছাড়া আরও অনেক খরচ রয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের নশরৎপুর এলাকার বাসিন্দা বাবলা মিয়া বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার সেচ খরচ বেশি পড়ছে। এ ছাড়া বীজসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।
উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের কাটিহাটা গ্রামের মজিবর রহমান বলেন, এ বছর প্রায় ছয় বিঘা জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধান চাষাবাদে খরচ অনেক বেশি পড়ছে। গত বছর প্রতি ঘণ্টায় সেচের পানি নিতে খরচ পড়ত ১০০-১১০ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ঘণ্টাপ্রতি ১৫০-১৬০ টাকা। এ ছাড়া সার কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে, কীটনাশক ও বীজের দামও বেড়েছে।
দশানি এলাকার কৃষক নূর আক্তার হোসেন বলেন, মজুরি বেশি তাই পরিবারের মা-স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়েই পরিচর্যা করছি। তবুও খরচ বেশি। একই কথা ওই এলাকার জাহিদুল ইসলাম সরকার। তিনি একাই নিড়ানি দিচ্ছেন।
একই উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের হাটলক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা কামল হোসেন। এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, বোরো ধান চাষাবাদের সঙ্গে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। আর তাই ধান উৎপাদনেও খরচ বাড়ছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, বোরো চাষে অতিরিক্ত সেচ লাগে। খরচ কমাতে কৃষকদের পরিমিত সেচ এবং নিয়ম মেনে সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য মনজুর আলম মিঠু বলেন, মৌসুম শেষে ধানের উপযুক্ত দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে কৃষক। এ জন্য সরকারিভাবে ধান-চালের বাজার তদারকিসহ এর সংগ্রহ অভিযান জোরদার করতে হবে।