
প্রতিনিধি, গাইবান্ধা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে ইনশাআল্লাহ। তখন তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নেতৃত্বে তিস্তাপাড়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা ব্রিজ পয়েন্টে আয়োজিত জনতার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এদিন সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরের তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলায় ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, ‘১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর যদি শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী করা হতো, তাহলে কি মুক্তিযুদ্ধ হতো? শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা দেননি, দিকনির্দেশনাও দেননি; বরং আওয়ামী লীগের নেতারা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। শেখ মুজিবের শাসনামলে রক্ষীবাহিনী হাজার হাজার দেশপ্রেমিক মানুষকে হত্যা করেছিল। তার সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, কুড়িগ্রামের বাসন্তী জাল পরিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করেছিলেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার ঘোষক এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের ভিত্তি ছিল ২৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা।
বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া গভীরভাবে জড়িত, তিনি দীর্ঘ নয় বছর আন্দোলন করেছেন। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি গঠিত হয়েছিল একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে, যা পরে রাজনৈতিক দলে রূপ নেয়। বিএনপি ১৮ কোটি মানুষের দল, শেখ হাসিনা চাইলেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দলে নিতে পারেননি। তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান বিগত ১৫ বছর লন্ডন থেকে সফলভাবে বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি আজও সংগঠিত রয়েছে এবং কেউ এই দল ভাঙতে পারেনি।’
তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। তিস্তা এবং অন্যান্য নদী রক্ষার জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার, না হলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। এ নির্বাচনে বিএনপি ২৫০ আসন পেয়ে নির্বাচিত হলেও বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করবে না বরং জাতীয় সরকার গঠন করবে।
বুলু আরও বলেন, যারা দীর্ঘ ১৬ বছর রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তারা শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, জনগণের দিকে তাকায়নি। আট হাজার কোটি টাকা দিতে চেয়েছিল চীন। তারা সমীক্ষা ও ডিজাইনও করেছিল, কিন্তু সরকার ভারতের পররাষ্ট্রনীতির কাছে নতজানু হওয়ার কারণে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আর আমরা ভারতের কথা শুনব না। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বিদেশ যদি সাহায্য না করে, বাংলাদেশের অর্থেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তিস্তা বাঁচাতে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে জাগতে হবে, তাহলেই দাবি আদায় হবে ইনশাআল্লাহ।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন গাইবান্ধা জেলা সমন্বয়কারী ও জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মইনুল হাসান সাদিক।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহমেদ ও সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামানিকের যৌথ সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজাহারুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি অধ্যাপক ডাঃ খন্দকার জিয়াউল ইসলাম জিয়া, সুন্দরগঞ্জ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কোনো একক সংগঠনের নয়, এটি সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই।
উল্লেখ্য, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আওতায় গাইবান্ধাসহ উত্তরের পাঁচ জেলার ১১টি পয়েন্টে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা অংশগ্রহণ করছেন এবং তিস্তা নদীর করুণ অবস্থা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন।