Dhaka ০৬:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বার মাসে তের ফসল ফলিয়েও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চরাঞ্চলের কৃষক

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫
  • ৩৪ Time View

স্টাফ রিপোর্টঃ কৃষি নির্ভর উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার চরগুলোতে ব্যাপক ফলন হলেও সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে পরিবহন খরচ পুষিয়ে পন্য আনা নেওয়া ও নির্ধারিত ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় বার মাসে তের ফসল ফলিয়েও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। চরবেষ্টিত সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তবুও থেমে নেই চরাঞ্চালের এই দরিদ্র মানুষগুলো। খেটে খাওয়া চরের মানুষের বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। খড়ায় নদী শুকিয়ে দুই থেকে তিন মাইল হেটে যেতে হয় ওই নৌ ঘাটে। তখন কৃষি জাত পণ্য মাথায় করে নিয়ে পায়ে হেটে আসা ছাড়া কোন উপায় থাকে না তাদের। তারপর নৌকা করে, পরে অটো বা ভ্যানে কৃষি পণ্য আনতে হয় বিভিন্ন হাট বাজারে। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তার চিকিৎসা নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে।
জানা গেছে, জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে জেগে উঠেছে ছোট-বড় ১৬৫টি চর-দ্বীপচর। এসব চরে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের একমাত্র পেশা হচ্ছে কৃষি।
ফুলছড়ি উপজেলার চর কাবিলপুর কৃষক হায়দার আলী (৫৫) বলেন, অনেক দুর থাকি হাটি আসা নাগে (হেটে আসতে হয়)। আমাগরে বিভিন্ন সমস্যা। ফসল বেচপার নিগবের (বেচতে নিয়ে যেতে চাইলে) গেলে কোন যানবহন নাই। মাথাত করি নিয়ে যাওন নাগে নাও ঘাটত, নাওত করি নদী পার হওন নাগে, তারপরে অটো বা ভ্যানত করি নিয়ে যাই হাটত। এত কষ্ট করি নিয়ে যায়য়্যা দামে পোষায় না। আক্ষেপ করে এই কথাগুলো বলেন তিনি।
শুধু হায়দার আলী নয়। এমন অভিযোগ মোসলেম আলী, রহমান মিয়া, আলেয়া বেগমসহ চরবাসির।
ষাটর্ধো বয়সী মুদি দোকানী মোসলেম আলী বলেন, যামো কাবিলপুর, করি মনোহারি ও কাঁচামালের ব্যাবসা। ঘাড়ত নিবার পারি দশ সের কিন্তু হছে ১মন এখন যাতেই হামার ঠ্যাং ছড়ায় গেল গা (পা ব্যাথা হয়ে গেছে)। কষ্ট আমগড়ে এহনে কোন যানবহন নাই, অটো নাই, ভ্যান নাই, যাওয়ার অনেক কষ্ট। ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায় কিন্তু ট্যাকা নাগে। এই কথা ওই এলাকার রহমান মিয়ারও।
সচেতন মহল বলছেন, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পটির উদ্দ্যোগ চরাঞ্চলের প্রয়োগ করা হয় তাহলে চরের মানুষের উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি করে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে চরবাসির।
এব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, সরকার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। যেখানে নিশ্চিত করা হবে কুষি পণ্য ক্রয় বিক্রয় কেন্দ্রসহ সকল নাগরিক সুবিধা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই উপজেলার একটা ইউনিয়নে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রতিষ্ঠায় একটা সমীক্ষা হয়ে গেছে। তার পর থেকে এব্যাপারে আর কোন তথ্য আসেনি।
‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র উদ্দ্যেশ্য গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। যেখানে থাকবে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধা।
এর আগে ১৯৯৯ সালের ২০ মে শহরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অবহেলিত, অসহায় এবং ভাগ্য বিড়ম্বিত ছিন্নমূল মানুষদের গ্রামের আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’ হাতে নেন সরকার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায় সেই ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

kartick kartick

Popular Post

বার মাসে তের ফসল ফলিয়েও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চরাঞ্চলের কৃষক

Update Time : ০৬:০৫:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টঃ কৃষি নির্ভর উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার চরগুলোতে ব্যাপক ফলন হলেও সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে পরিবহন খরচ পুষিয়ে পন্য আনা নেওয়া ও নির্ধারিত ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় বার মাসে তের ফসল ফলিয়েও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। চরবেষ্টিত সকল নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তবুও থেমে নেই চরাঞ্চালের এই দরিদ্র মানুষগুলো। খেটে খাওয়া চরের মানুষের বর্ষায় যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। খড়ায় নদী শুকিয়ে দুই থেকে তিন মাইল হেটে যেতে হয় ওই নৌ ঘাটে। তখন কৃষি জাত পণ্য মাথায় করে নিয়ে পায়ে হেটে আসা ছাড়া কোন উপায় থাকে না তাদের। তারপর নৌকা করে, পরে অটো বা ভ্যানে কৃষি পণ্য আনতে হয় বিভিন্ন হাট বাজারে। আর যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তার চিকিৎসা নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপাকে।
জানা গেছে, জেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা ও যমুনার ভাঙনের কবলে পড়ে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চলে জেগে উঠেছে ছোট-বড় ১৬৫টি চর-দ্বীপচর। এসব চরে প্রায় ৪ লাখ মানুষের বসবাস। তাদের একমাত্র পেশা হচ্ছে কৃষি।
ফুলছড়ি উপজেলার চর কাবিলপুর কৃষক হায়দার আলী (৫৫) বলেন, অনেক দুর থাকি হাটি আসা নাগে (হেটে আসতে হয়)। আমাগরে বিভিন্ন সমস্যা। ফসল বেচপার নিগবের (বেচতে নিয়ে যেতে চাইলে) গেলে কোন যানবহন নাই। মাথাত করি নিয়ে যাওন নাগে নাও ঘাটত, নাওত করি নদী পার হওন নাগে, তারপরে অটো বা ভ্যানত করি নিয়ে যাই হাটত। এত কষ্ট করি নিয়ে যায়য়্যা দামে পোষায় না। আক্ষেপ করে এই কথাগুলো বলেন তিনি।
শুধু হায়দার আলী নয়। এমন অভিযোগ মোসলেম আলী, রহমান মিয়া, আলেয়া বেগমসহ চরবাসির।
ষাটর্ধো বয়সী মুদি দোকানী মোসলেম আলী বলেন, যামো কাবিলপুর, করি মনোহারি ও কাঁচামালের ব্যাবসা। ঘাড়ত নিবার পারি দশ সের কিন্তু হছে ১মন এখন যাতেই হামার ঠ্যাং ছড়ায় গেল গা (পা ব্যাথা হয়ে গেছে)। কষ্ট আমগড়ে এহনে কোন যানবহন নাই, অটো নাই, ভ্যান নাই, যাওয়ার অনেক কষ্ট। ঘোড়ার গাড়ি পাওয়া যায় কিন্তু ট্যাকা নাগে। এই কথা ওই এলাকার রহমান মিয়ারও।
সচেতন মহল বলছেন, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পটির উদ্দ্যোগ চরাঞ্চলের প্রয়োগ করা হয় তাহলে চরের মানুষের উৎপাদিত ফসল সহজেই বিক্রি করে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবে ও প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্যসেবাসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে চরবাসির।
এব্যাপারে ফুলছড়ি উপজেলা নিবার্হী অফিসার জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, সরকার ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো। যেখানে নিশ্চিত করা হবে কুষি পণ্য ক্রয় বিক্রয় কেন্দ্রসহ সকল নাগরিক সুবিধা। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এই উপজেলার একটা ইউনিয়নে ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রতিষ্ঠায় একটা সমীক্ষা হয়ে গেছে। তার পর থেকে এব্যাপারে আর কোন তথ্য আসেনি।
‘আমার গ্রাম, আমার শহরে’র উদ্দ্যেশ্য গ্রামবাংলার প্রাকৃতিক রূপ অটুট রেখে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেয়া। যেখানে থাকবে উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে আধুনিক শহরের সব সুবিধা।
এর আগে ১৯৯৯ সালের ২০ মে শহরের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী অবহেলিত, অসহায় এবং ভাগ্য বিড়ম্বিত ছিন্নমূল মানুষদের গ্রামের আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’ হাতে নেন সরকার। কিন্তু রহস্যজনক কারণে বন্ধ হয়ে যায় সেই ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’।