Dhaka ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পলাশবাড়ীতে ৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ৩৯ Time View

আরিফ উদ্দীন, পলাশবাড়ি প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অলিরঘাট পারাপারে ৫গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো। ব্রীজের অভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভোগান্তির যেন কমতি নেই। স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকাল হতে এই চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ৫ গ্রামের মানুষের জীবন যাপন করে চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমের সীমানা ঘেঁষে যাওয়া প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো গনকপাড়া গ্রামে সীমানায় করতোয়া নদীর অলিরঘাট। নদী হতে ঘাটের কিনারা অনেক উঁচু হওয়ায় নদী পারাপারে রিক্সা-ভ্যান, সাইকেল-মটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গনকপাড়া, জাফর, মুংলিশপুর, পালপাড়া, শীলপাড়া, জাইতর গ্রামের মানুষজন এপার থেকে ওপারে চলাচলের জন্য শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া ব্যবহার করেন।
নদীর পানি শুকিয়ে গেলে চলাচলের জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁশের সাকো তৈরি করা হয়। নদীতে পানি বেড়ে গেলে পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও থাকে না। তখন ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি যেন আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন যাতায়াত করা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, এনজিওকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই অলিরঘাট দিয়ে চলাচল করে থাকেন। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে।
জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একটি ব্রীজ নির্মাণ হয়নি। এ ভোগান্তি যেন পথচারীদের নিত্য-দিনের সঙ্গী। অলিরঘাট পেড়িয়ে পাশ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দুরুত্ব ২ কিলোমিটার। যাতায়াতের বিকল্প ২ কি. মি. রাস্তা ব্যবহারের স্থলে পথচারীদের ঘুরতে হয় অন্তত ৮ কিলোমিটার রাস্তা। তাই এ ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য শিক্ষার্থী, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। পথচারীরা এই ঘাট পার হয়ে বৃহত্তর হাট-বাজারগুলোতে যাতায়াত করে থাকেন। সাধারণ মানুষের দাবী এই গুরুত্বপুর্ণ স্থানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, আশে পাশের গ্রামের মানুষও এই ঘাট দিয়ে পার হয়। বিশেষ করে আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট ব্যবসা বাণিজ্য ও হাট-বাজার করে। তারা অন্য ঘাট দিয়ে পার হয়ে গিয়ে দুপুরে বাড়িতে যখন আসে। তখন নদীর ওই পারে যানবাহন ও সাইকেল রেখে আসতে হয়। শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে পারাপারের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুব দরকার।
উপজেলা সচেতন মহলের দাবী দীর্ঘদিন হচ্ছে উক্ত এলাকার মানুষের পারাপারে জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছে। ব্রীজটি নির্মাণ করা হলে সবার অনেক উপকার হবে। তখন আর কারো সমস্যায় ভুগতে হবে না। মানুষের যাওয়া আসা অনেক সহজ হবে। ৫ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনে ভোগান্তি কমে আসবে। গনকপাড়া গ্রামের শাহ আলম জানান, ব্রীজের কারণে সন্তানদের পড়া লেখা কমে গেছে। এছাড়াও এই গ্রামের ছেলে মেয়েদের ভালো পরিবারে বিয়ে সাধিও হচ্ছে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী তপন চক্রবর্তী জানান, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করলেও এরআগে জেলা অফিসে রয়েছিলাম। আমার জানা মতে জেলার অনেকগুলো ব্রীজ নির্মাণের আবেদন পাঠানো হয়েছে। উক্ত স্থানের বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইয়াসা রহমান তাপাদার জানান, ব্রীজটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রয়োজনীয় আবেদন জানানো হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

পলাশবাড়ীতে ৫ গ্রামের মানুষ চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোতে!

Update Time : ০৪:০৯:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আরিফ উদ্দীন, পলাশবাড়ি প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গণকপাড়া গ্রামের সীমানা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর অলিরঘাট পারাপারে ৫গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকো। ব্রীজের অভাবে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের ভোগান্তির যেন কমতি নেই। স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকাল হতে এই চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে ৫ গ্রামের মানুষের জীবন যাপন করে চলছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিমের সীমানা ঘেঁষে যাওয়া প্রায় ৬০ বছরের পুরোনো গনকপাড়া গ্রামে সীমানায় করতোয়া নদীর অলিরঘাট। নদী হতে ঘাটের কিনারা অনেক উঁচু হওয়ায় নদী পারাপারে রিক্সা-ভ্যান, সাইকেল-মটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণে উপজেলার কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের গনকপাড়া, জাফর, মুংলিশপুর, পালপাড়া, শীলপাড়া, জাইতর গ্রামের মানুষজন এপার থেকে ওপারে চলাচলের জন্য শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে নৌকা ছাড়া ব্যবহার করেন।
নদীর পানি শুকিয়ে গেলে চলাচলের জন্য স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্যোগে বাঁশের সাকো তৈরি করা হয়। নদীতে পানি বেড়ে গেলে পারাপারের জন্য নৌকার ব্যবস্থাও থাকে না। তখন ওই এলাকার মানুষের ভোগান্তি যেন আরো বেড়ে যায়। প্রতিদিন যাতায়াত করা স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, এনজিওকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই অলিরঘাট দিয়ে চলাচল করে থাকেন। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয় পণ্য আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে।
জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও আজও একটি ব্রীজ নির্মাণ হয়নি। এ ভোগান্তি যেন পথচারীদের নিত্য-দিনের সঙ্গী। অলিরঘাট পেড়িয়ে পাশ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দুরুত্ব ২ কিলোমিটার। যাতায়াতের বিকল্প ২ কি. মি. রাস্তা ব্যবহারের স্থলে পথচারীদের ঘুরতে হয় অন্তত ৮ কিলোমিটার রাস্তা। তাই এ ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য শিক্ষার্থী, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হয়। পথচারীরা এই ঘাট পার হয়ে বৃহত্তর হাট-বাজারগুলোতে যাতায়াত করে থাকেন। সাধারণ মানুষের দাবী এই গুরুত্বপুর্ণ স্থানে একটি ব্রীজ নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, আশে পাশের গ্রামের মানুষও এই ঘাট দিয়ে পার হয়। বিশেষ করে আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট ব্যবসা বাণিজ্য ও হাট-বাজার করে। তারা অন্য ঘাট দিয়ে পার হয়ে গিয়ে দুপুরে বাড়িতে যখন আসে। তখন নদীর ওই পারে যানবাহন ও সাইকেল রেখে আসতে হয়। শুকনা মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষা মৌসুমে পারাপারের কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিভিন্ন সমস্যা পোহাতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ খুব দরকার।
উপজেলা সচেতন মহলের দাবী দীর্ঘদিন হচ্ছে উক্ত এলাকার মানুষের পারাপারে জন্য একটি ব্রীজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে আসছে। ব্রীজটি নির্মাণ করা হলে সবার অনেক উপকার হবে। তখন আর কারো সমস্যায় ভুগতে হবে না। মানুষের যাওয়া আসা অনেক সহজ হবে। ৫ গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনে ভোগান্তি কমে আসবে। গনকপাড়া গ্রামের শাহ আলম জানান, ব্রীজের কারণে সন্তানদের পড়া লেখা কমে গেছে। এছাড়াও এই গ্রামের ছেলে মেয়েদের ভালো পরিবারে বিয়ে সাধিও হচ্ছে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা প্রকৌশলী তপন চক্রবর্তী জানান, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করলেও এরআগে জেলা অফিসে রয়েছিলাম। আমার জানা মতে জেলার অনেকগুলো ব্রীজ নির্মাণের আবেদন পাঠানো হয়েছে। উক্ত স্থানের বিষয়ে জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইয়াসা রহমান তাপাদার জানান, ব্রীজটি জনগুরুত্বপূর্ণ হলে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিকট প্রয়োজনীয় আবেদন জানানো হবে।