
তোফায়েল হোসেন জাকিরঃ নিভৃত গ্রামাঞ্চলের নজিম উদ্দিন। বয়স প্রায় ৬৫ ছুঁইছুঁই। এক সময় ধুমপানে তার অন্যতম মাধ্যম ছিলো হুক্কা। এখন কালের বিবর্তনে সেই হুক্কা হারিয়ে গেছে। ধুমপানে উদ্বুর্ধ নয়, শুধু নতুন প্রজন্মকে জানান দিতে হুক্কা হাজির হন বান্নি মেলায়। সেখানে তার হুক্কার টানে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন তরুণ সমাজ।
গতকাল চৈত্র সংক্রান্তিতে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার পীরের পন্যভূমিতে অনুষ্ঠিত বান্নি মেলায় দেখা গেছে- এই নছিম উদ্দিনকে। সেখানে বেশ কিছু তরুণকে হুক্কায় ধুমপানের কৌশলটি দেখান। এসময় আবহমান গ্রামবাংলার এই হুক্কা দেখা অবাক হয়েছিলেন একদল তরুণ। একেবারেই উচ্ছ্বসিত তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কুয়েক যুগ আগে আবহমান বাংলার গ্রাম-গঞ্জে ধুমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যামে তামাক পানের নেশায় অভ্যস্ত ছিল। সে সময় ধনী-গরীব প্রায় সকলের বাড়িতেই হুক্কার প্রচলন ছিল। সেই হুক্কা কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও পাওয়া যায় না হুক্কার দেখা। কালের বিবর্তনে অনেকটা হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী হুক্কা।
প্রবীণ ব্যক্তি খেতাব উদ্দিন ব্যাপারী জানায়, প্রায় তিন-চার দশক আগেও বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাকপানের নেশায় ছিল অভ্যস্ত। সে সময় দেশের প্রায় সব বাড়িতেই ছিল এর প্রচলন। তখনকার দিনে সামাজিক অনুষ্ঠান বা জমায়েতে ছোটবড় সবাইকে হুক্কায় আপ্যায়নের রীতি ছিল। প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে লম্বা পাইপযুক্ত স্ট্যান্ড হুক্কা ওই বাড়ির শোভাবর্ধন ও প্রভাবের সাক্ষ্য বহন করত। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হুক্কা একটি অপরিচিত বস্তু হয়েছে। এটি খাওয়া দূরের কথা, চোখেই দেখেনি তারা।
সাদুল্লাপুরের পীরেরহাট বান্নি মেলায় আসা হুক্কা সেবনকারী নছিম উদ্দিন বলেন, তিন-চার দশক পূর্বেও আমাদের বাপদাদারা তিন বেলা খাবার খেতে ততটা আগ্রহী হতেন না যতটা আগ্রহী ছিলেন হুক্কা টানায়। এ ছাড়া তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন কল্পনাও করা যেত না। ঘরে চালডাল না থাকলেও যথেষ্ট পরিমাণে জমা থাকত হুক্কার তামুক। তামাকপাতা টুকরা টুকরা করে কেটে এনে এতে চিটাগুড় মিশিয়ে তৈরি করা হতো বিশেষ এ তামুক। এতে নিকোটিনের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যতটুকু নিকোটিন থাকে তা নারকেলের টোলে থাকা পানিতে মিশে যায়।
সাদুল্লাপুরের মোসলেম উদ্দিন নামের এক শিক্ষক বলেন, বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এ হুক্কার জায়গায় বাজার দখল করেছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নিকোটিনযুক্ত বিড়ি-সিগারেটসহ অন্যান্য মাদক দ্রব্য। প্রজন্মের একটা বড় অংশ নিষিদ্ধ মাদকের নেশায় মাতোয়ারা। অথচ কম নিকোটিনযুক্ত হুক্কার প্রচলন থাকলে যুবসমাজকে মাদক গ্রহণের অধঃপতন থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা যেত।