
গোলাম মাহবুবঃ প্রাচীন এবং ক্ষুদ্র আয়তনের মসজিদের মধ্যে একটি হলো কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মসজিদেরপাড় এলাকার দ্ইু কাতার/তিন গম্বুজ মসজিদ। মসজিদটির অতিত ইতিহাস কেউ না জানলেও ধারনা করা হচ্ছে এটি সাড়ে ৪শ বছরের পুরাতন মুঘল আমলে নির্মিত একটি ক্ষুদ্র আকৃতির মসজিদ। প্রাচীন কালের সাক্ষী ওই মসজিদের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয়েছে মসজিদেরপাড় গ্রাম। মসজিদটির বিভিন্ন জায়গার মুঘল আমলের স্থাপত্যশিল্পের ছাপ অংকিত ছিল। এটি কত সালে নির্মিত,সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটির স্থাপত্যশৈলীসহ বিভিন্ন দিক থেকে ধারনা করা হয় এটি সাড়ে ৪শ বছর পূর্বের মুঘল আমলের একটি স্থাপনা।
সরেজমিনে উপজেলা শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে মসজিদেরপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়,প্রায় সাড়ে ৪শ বছরের পুরাতন ধূসর বর্ণের পাথরে অসাধারণ নির্মাণশৈলীর তিন গম্বুজের এই মসজিদটি। উত্তর-দক্ষিণে ৪০ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে ২০ফুট আয়তনের তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদের সামনে তিনটি দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণে মুখো দুইটি জানালা আছে। দরজা ও জানালা থেকে বুঝা যায় এটির দেয়ালগুলি প্রায় ৫ফুট চওড়া। দেয়ালে গাঁথুনিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা ধরনের ইট ও টালির সাথে চুন সুরকি। চুন সুরকির সাথে এক ধরনের ডালও মেশানো হয়েছে বলে অনেকের ধারনা। ভীতরের দেয়ালে আঁকা ছিল নানা ধরনের লতাপাতা ও ফুলের কারুকাজ যা প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে। মসজিদের সামনে ছিল বিশাল আকৃতির একটি কুপ। কুপের গাঁথুনিও ছিল পাতলা আকৃতির ইট ও টালি যা চুন সুরকি দিয়ে আটকানো। বালতি দিয়ে কুপ থেকে পানি তুলে ওজু করতেন নামাজের জন্য আসা মুসল্লিরা। মসজিদটির ভিতরে দুই কাতারে ৪০জন একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি কত সালে নির্মিত,সে সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটির স্থাপত্যশৈলীসহ বিভিন্ন দিক থেকে ধারনা করা হয় এটি সাড়ে ৪শ বছর পূর্বের মুঘল আমলের একটি স্থাপনা।
এলাকায় মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকায় মসজিদে জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না। এজন্য ২০১৪সালের মাঝা-মাঝি সময়ে এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে পুরাতন মসজিদের সাথে মিল রেখে সামনে প্রায় ৩০ফুট বর্ধিত করেন।
প্রাচীন এই মসজিদটিতে জীনেরও অবস্থান ছিল বলেও অনেকের ধারনা।আজান দিতে আসা দুই মুয়াজ্জিনকে থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অনেকে জানান। প্রাচীন মসজিদ এবং মসজিদকে ঘিরে নানা অলৌকিক ঘটনা কথিত থাকায় জটিল রোগ থেকে মুক্তি ও কাজে সফলার জন্য এ মসজিদে মানতের প্রচলন অনেক দিনের। আর সে কারনে মানতে বিশ্বাসীরা অনেক দুর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রকার মানত সামগ্রী নিয়ে প্রতি শুক্রবার এখানে আসেন।
মসজিদেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মো.আয়নাল্লী(৬৫), শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম(১৮)সহ অনেকে জানান,মসজিদটি পুরাতন হওয়ায় এখানে শুক্রবারের নামাজ পড়তে অনেক মানুষ ছুটে আসেন। এর মধ্যেই অনেকের সাথে বিভিন্ন প্রকার মানতের সামগ্রী দেখতে পাওয়া যায়।
মো.সাহেব আলী(৫০)জানান,এই এলাকার প্রবীন মানুষ আমার জেঠা ইমাম উদ্দিন। বর্তমানে তার বয়স ১০৬বছর। তার নিকট মসজিদ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন,আমাদের দাদার নিকট মসজিদের জন্ম কথা জানতে চেয়েছিলাম,কিন্তু তিনিও এর সম্পর্কে কিছু জানতেন না। তবে কারুকাজ এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এটি সাড়ে ৪শ বছর আগের মুঘল আমলের হতে পারে বলে তারা জানান।