
মৌলভীবাজার সংবাদদাতাঃ চা শ্রমিকদের মজুরি অত্যন্ত কম। বাংলাদেশে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮ দশমিক ৫ পয়সা যা একটি পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য অপ্রতুল। ভারতে অবস্থিত চা বাগানগুলিতেও পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। এই স্বল্প মজুরির কারণে তারা প্রায়ই ঋণের বোঝা টেনে নিয়ে এবং দারিদ্র্যের ঘেরাকল থেকে বের হতে পারেন না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের আর্থিক সংকট আরও তীব্র হয়ে মানববেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।
চা শ্রমিকদের বসবাসের পরিবেশ অত্যন্ত নিম্নমানের। তারা সাধারণত বাগানের ভিতরে ছোট ছোট কুঁড়েঘরে বসবাস করেন, যেখানে বিদ্যুৎ, পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে। ঘরগুলি প্রায়ই এখন বৃষ্টির সিজনে ভিজে যায় এবং শীতকালে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকে না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় ঘনবসতির সমস্যাও প্রকট আকারে বিরাজমান।
স্বাস্থ্য সেবার অভাবে চা শ্রমিকরা নানা রোগে আক্রান্ত হন। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হারও খুব বেশি। চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তারা প্রায়ই অসুস্থতা নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হন। নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের সময়ে।
শিক্ষার ক্ষেত্রেও চা শ্রমিকরা পিছিয়ে রয়েছেন। স্কুলের সুবিধা না থাকা এবং দারিদ্র্যের কারণে অনেক শিশুই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় প্রতিনিয়ত। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে শিশুরা প্রায়ই স্কুল ছেড়ে কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়, যা তাদের আরও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়।
চা শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ অত্যন্ত কঠিন। তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেন, কিন্তু তার বিনিময়ে তারা খুব কমই পান। কাজের সময়ে তারা প্রায়ই রোদ, বৃষ্টি এবং ঠান্ডার মধ্যে থাকেন, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাবে বহুকাল ধরেই চলমান।
চা শ্রমিকরা প্রায়ই সমাজের মূলধারার বাইরে অবস্থান করেন। তাদের সামাজিক মর্যাদা কম এবং তারা প্রায়ই বৈষম্যের শিকার হন। তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হয় না এবং তাদের অধিকার রক্ষার জন্য কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ ও নেয়া হয় নাই।
চা শ্রমিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও আওয়ামীলীগ সরকারের তৃণমূল নেতাদের অনিয়মের কারনে তাও পৌঁছায় নি। মজুরি বৃদ্ধি, বসবাসের পরিবেশ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানো এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে। চা শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি চা শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের কষ্ট ভরা জীবনযাপনের এই চিত্র পরিবর্তনের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে এখনি এগিয়ে আসা এবং মানব জীবনের নূন্যতম অধিকারটুকু ফিরিয়ে দেওয়া।