
গোবিন্দগঞ্জ সংবাদদাতাঃ আনেকটা সংগ্রামী জীবন পর করেছেন জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের নারী কৃষি উদ্যোক্তা মমতাজ আকত্ার। নিজের দারিদ্রতা জয় করার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুজে পেছেন তিনি। নিজের সফলতার পর এলাকার অন্য নারীদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে প্রায় অর্ধশত নারীকে আয় বৃদ্ধি মূলক কাজে সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী করেছেন সে। ২০১৯ সালে ৬০ জন নারী সদস্য নিয়ে এলাকায় মমতাজ পল্লী উন্নয়ন মহিলা যুব সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন এ নারী। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জাতীয় যুব পুরস্কার-২০২৪ লাভ করেন মমতাজ। তার এমন সফল্য অন্য নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তিনি।
১৯৯২ সালে জম্ম এ নারীর বাবার বাড়ি একই উপজেলার তালুককানুপুর ইউনিয়নের ছোট জামালপুর গ্রামে। ছোটবেলা থেকে উদ্যমী এ নারী ২০০৮ সালে স্থানীয় বাসুদেবপুর চন্দ্র কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করেন। নানা কারনে পিতার সংসারে থাকা অবস্থায় পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। এরপর ২০১০ সালে ১০ নভেম্বর দরবস্ত ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বেলাল হোসেনের সাথে পারিবারিক ভাবে ভাবে বিয়ে হয় মমতাজের। স্বামীর সংসারে এসে দারিদ্রতার কবলে পরেন মমতাজ। ্সংসারের দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পেতে হাস-মুরগী ও ছাগল পালন শুরু করেন। এরপর উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে ২০১৬ সালে গরু মোটাতাজার করনের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। পরে পর্যাক্রমে ২০১৭ সালে গাভী পালন,মিষ্টি তৈরি,২০১৮ সালে নার্সারি এবং ২০১৯ সালে মৎস্য চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়াও দর্জি বা টেইলারিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এ নারী। প্রশিক্ষণ নিযে তিনি গরু মোটাতাজার,গাভী পালন.নার্সারি,জৈব সার উৎপাদন ও দেশিয় প্রজাতির মাছ শুরু করেন। এতে ভালো আয় হয় তার। দারিদ্রতা জয় করা এ নারী আবারো পড়ালেখা শুরু করেন এবং ২০২০ সালে বিশুবাড়ী কারিগরি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ২০২১ সালে মমতাজ কম্পিউটার প্রশিক্ষন গ্রহন করেন। এখন এ নারী একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন। তার সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকার অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার হাতধরে একই ইউনিয়নের দুর্গাপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের গোলাপী বেগম এখন বাড়ীতে দর্জির কাজ করেন। মিরুপাড়া গ্রামে এক নারী ১৮টি ছাগল পালন করছেন এবং দুর্গাপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের আতিকা গরু মোটাতাজার খমার শুরু করেছেন।
নারী কৃষি উদ্যোক্তা মমতাজ আকত্ার বলেন স্বামীর সংসারে এসে প্রথমে আভাবঅনটন আর দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটিয়েছি। কোন বেলা নাখেয়ে দিন পার করতে হয়েছে। আল্লাহর রহমত আর নিজের ইচ্ছাশক্তি কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রমে মধ্যদিয়ে আমাদের সফলতা এসেছে। এখন আমরা অনেকটাই স্বাবলম্বী। হাস-মুরগী ও ছাগল পালন,গাভী পালন ও নার্সারি এবং জৈব সার উৎপাদন করছি। সব সময় স্বামী আমাকে সহযোগিতা করে আসছে। গ্রামে নতুন করে পাকা বাড়ী করছি। গরু পলনের জন্য একটা সেট তৈরির কাজ চলছে। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করানো হচ্ছে। গ্রামের অনেক নারীকে নানা ধরনের কাজে সম্পৃক্ত করেছি। তারাও এখন আয় করছে দেখে ভালো লাগে। আমি চাই সবাই যেন নিজে কাজ করে আয় করে স্বাবরম্বী হতে পারে। কেউ যেন দারিদ্র হয়ে না থাকে। গ্রামের দরিদ্র নরীদের ছাগল পালন করতে দিয়েছি। ছাগলের প্রথম বচ্চাটা সে নিবে পরের বচ্চটা আমি নেব। আর দুটি হলে একটা ছাগলের বাচ্চা তার আরেকটা আমার।
উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার সত্য রনজন সাহা বলেন মমতাজ যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নানা আয় বৃদ্ধি মুলক কাজ করে আজ স্বাবলম্বী ও আত্মকর্মী হয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জাতীয় যুব পুরস্কারও পেয়েছেন। তাকে দেখে অন্য নারীরাও স্বাবলম্বী এবং আত্মকর্মী হবেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোছাঃ ফারজানা ইয়াসমিন বলেন নারীরা এগিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। নারীদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন সম্ভাব নয়। নারীদের আগ্রজাত্রায় অনুকরনিয় আদর্শ মমতাজ। নারীরা স্বাবলম্বী হলে দেশে দরিদ্রতা কমে আসবে,সেই সাথে বল্যবিবাহ কমে আসবে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা। নারীদের ক্ষমতায়ন বরলে নারী নির্যাতন হ্রাস পাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের পাশাপাশি নারীদেরকে কৃষি বিষয়ক নানা প্রশিক্ষন দিয়ে আসছে। কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হয়ে মমতাজ আকতার তার দারিদ্রতা জয় করতে পেরেছেন। এখন সে স্বাবলম্বী এক আত্মকর্মী হয়ে উঠেছেন। মমতাজের সফরতা অন্যকে অনুপ্রাণিত করবে। সেই দেশে অনেক নারী তার দারিদ্রতা জয় করে স্বাবলম্বী হবে এবং নতুন উদ্যোক্ত সৃষ্টি হবে এমন প্রত্যাশা কৃষি বিভাগের।