Dhaka ০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:২৯:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫
  • ২৩ Time View

সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্তের ‘দুই থানার মোড়’ নামক স্থানে গত ৫ দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাইকিং করে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে। তবে, সীমান্তের দু’পাশের ২ ইউরিয়নবাসীর মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ও চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়ন বাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন। চলতে থাকে হামলা, লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। এতে উভয় ইউনিয়নবাসীর মধ্যে নারী ও শিশু মিলে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রমনা ইনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪৮) রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যান্যরা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নানাস্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রমনা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকাসহ স্থানীয়রা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, গত শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের কয়েকজন মেয়ে হরিপুর তিস্তাব্রিজ পয়েন্টে বেরাতে যায়। এসময় স্থানীয় ডাঙ্গারচর এলাকার আঃ কাদেরের ছেলে মমিন (১৮), ফরহাদের ছেলে সুমন (১৭) ও আঃ রাজ্জাকের ছেলে পায়েল (১৯) মেয়েদের আপত্তি উপেক্ষা করে মোবাইলফোনে ছুবি তোলে। তারা (মেয়েরা) তাৎক্ষণিক উপস্থিত অন্যান্য দর্শনার্থীদেরকে বিচার দেন। এনিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। বিরাজমান এ উত্তেজনা দীর্ঘরূপ নেয়। ৫ দিন ধরে দফায় দফায় সৃষ্ট সংঘর্ষে চিলমারীর রমনা ইউনিয়নবাসী সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নবাসীকে দুই থানার মোড় (শহরের মোড়ে) উঠতে দিবেননা। পক্ষান্তরে হরিপুর ইউনিয়নবাসীও রমনা ইউনিয়নবাসীকে উক্ত মোড়ে উঠতে না দেয়ার জন্য কঠোর অবস্থান নেন। এনিয়ে রমনা ইউনিয়নবাসী পাশের কয়কটি চরে আক্রমণ করারর প্রস্তুতি নিয়ে মাইকে ঘোষণা দেন। অপরদিকে হরিপুর ইউনিয়ন বাসীও এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ করার ঘোষণায় মাইকে প্রচারণা চালান। একপর্যায়ে সীমান্তের উভয় পাশের মাঝে আবারো সংঘর্ষের রূপ নেয়।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী, পুলিশ, উভয় পাশের সংশ্লিষ্ট ২ ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ এসসয় মেয়েদের ছবি তোলায় ঐ ৩ বখাটেকে আটক করে নিয়ে যায় প্রশাসন। এরপর রাতে আবারো দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের ফলে তা আর তেমন একটা বড় ধরেণের রূপ নেয়নি। রমনা ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, হরিপুর ইউনিয়নের লোকেরা হামলা করে ২টি সেচপাম্প নিয়ে গেছে। ফলে চলতি মৌসূমে বাড়ন্ত ফসলের ক্ষেতে সেচ দেয়া বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয়দের বর্ণনামতে সংঘর্ষে ২৫-৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম জানান, রমনা ইউনিয়নবাসী হামলা করে বাড়িঘরের ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট, মারপিট করে। এতে তাঁর ইউনিয়নের অনেকেই গুরুতর আহত হন
তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া, রমনা ইউনিয়নবাসী হামল করে হরিপুর ইউনিয়নবাসীর ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তাদের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম সেনাক্যাম্পে ইনচার্জের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সদস্য, চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি, তিনিসহ ২ পাশের দুই ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতে ব্যাপক আলোচনা করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে, কেউ কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেননা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আর কোন অবনতি ঘটানো যাবেনা। রাস্তা বন্ধ করা যাবেনা। মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, আহত আলমগীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জেনেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। তবে, আর উত্তেজনা যাতে না বাড়ে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আর কোন অবনতি নর ঘটে। সেজন্য প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।।

 

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

kartick kartick

Popular Post

গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

Update Time : ০৮:২৯:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫

সুন্দরগঞ্জ সংবাদদাতাঃ গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা সীমান্তের ‘দুই থানার মোড়’ নামক স্থানে গত ৫ দিন ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মাইকিং করে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবী করা হচ্ছে। তবে, সীমান্তের দু’পাশের ২ ইউরিয়নবাসীর মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাত পর্যন্ত সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ও চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়ন বাসী মাইকে ঘোষণা দিয়ে দফায় দফায় ব্যাপক সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়েন। চলতে থাকে হামলা, লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। এতে উভয় ইউনিয়নবাসীর মধ্যে নারী ও শিশু মিলে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রমনা ইনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের আলমগীর হোসেন (৪৮) রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যান্যরা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ নানাস্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রমনা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকাসহ স্থানীয়রা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলেন, গত শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকালে রমনা ইউনিয়নের পাত্রখাতা গ্রামের কয়েকজন মেয়ে হরিপুর তিস্তাব্রিজ পয়েন্টে বেরাতে যায়। এসময় স্থানীয় ডাঙ্গারচর এলাকার আঃ কাদেরের ছেলে মমিন (১৮), ফরহাদের ছেলে সুমন (১৭) ও আঃ রাজ্জাকের ছেলে পায়েল (১৯) মেয়েদের আপত্তি উপেক্ষা করে মোবাইলফোনে ছুবি তোলে। তারা (মেয়েরা) তাৎক্ষণিক উপস্থিত অন্যান্য দর্শনার্থীদেরকে বিচার দেন। এনিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। বিরাজমান এ উত্তেজনা দীর্ঘরূপ নেয়। ৫ দিন ধরে দফায় দফায় সৃষ্ট সংঘর্ষে চিলমারীর রমনা ইউনিয়নবাসী সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ইউনিয়নবাসীকে দুই থানার মোড় (শহরের মোড়ে) উঠতে দিবেননা। পক্ষান্তরে হরিপুর ইউনিয়নবাসীও রমনা ইউনিয়নবাসীকে উক্ত মোড়ে উঠতে না দেয়ার জন্য কঠোর অবস্থান নেন। এনিয়ে রমনা ইউনিয়নবাসী পাশের কয়কটি চরে আক্রমণ করারর প্রস্তুতি নিয়ে মাইকে ঘোষণা দেন। অপরদিকে হরিপুর ইউনিয়ন বাসীও এর বিপক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ করার ঘোষণায় মাইকে প্রচারণা চালান। একপর্যায়ে সীমান্তের উভয় পাশের মাঝে আবারো সংঘর্ষের রূপ নেয়।
খবর পেয়ে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা ক্যাম্পের সেনাবাহিনী, পুলিশ, উভয় পাশের সংশ্লিষ্ট ২ ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ এসসয় মেয়েদের ছবি তোলায় ঐ ৩ বখাটেকে আটক করে নিয়ে যায় প্রশাসন। এরপর রাতে আবারো দু’পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করলেও প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের ফলে তা আর তেমন একটা বড় ধরেণের রূপ নেয়নি। রমনা ইউপি চেয়ারম্যান আরো বলেন, হরিপুর ইউনিয়নের লোকেরা হামলা করে ২টি সেচপাম্প নিয়ে গেছে। ফলে চলতি মৌসূমে বাড়ন্ত ফসলের ক্ষেতে সেচ দেয়া বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয়দের বর্ণনামতে সংঘর্ষে ২৫-৩০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম জানান, রমনা ইউনিয়নবাসী হামলা করে বাড়িঘরের ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট, মারপিট করে। এতে তাঁর ইউনিয়নের অনেকেই গুরুতর আহত হন
তাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া, রমনা ইউনিয়নবাসী হামল করে হরিপুর ইউনিয়নবাসীর ঘরবাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর, লুটপাট, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তাদের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
তিনি আরো বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম সেনাক্যাম্পে ইনচার্জের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সদস্য, চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানার ওসি, তিনিসহ ২ পাশের দুই ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতে ব্যাপক আলোচনা করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের দাবী-দাওয়া নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তবে, কেউ কাউকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেননা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আর কোন অবনতি ঘটানো যাবেনা। রাস্তা বন্ধ করা যাবেনা। মর্মে সিদ্ধান্ত হয়।
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান, আহত আলমগীরের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জেনেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। তবে, আর উত্তেজনা যাতে না বাড়ে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আর কোন অবনতি নর ঘটে। সেজন্য প্রশাসনিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।।