
শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে কাজ করে কিডনি। পাশাপাশি, শরীরের সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফেটের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে এই যন্ত্র। কিডনির সমস্যা থাকলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে দেখা দেয় নানা শারীরিক সমস্যা।
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। নারীদের ক্ষেত্রে পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ-এর ঝুঁকিও বেশি।
৩০ পার হওয়া নারীদের মধ্যে ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে। কিডনিতে সমস্যা থাকলে প্রতিদিনের খাবারে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসের মাত্রার ওপর নজর রাখতে হবে।
শরীরে পটাশিয়াম বেড়ে গেলে কিডনির কাজে ব্যাঘাত ঘটে। তখন এমন খাবার খেতে হবে, যার মাধ্যমে ২০০ মিলিগ্রামের কম পটাশিয়াম শরীরে প্রবেশ করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের ঘাটতি হলে কিডনি অকেজো হতে শুরু করে। কী সেই ভিটামিন, তা জানেন কী?
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি থাকলে কিডনি বিকল হতে থাকে।
ফলে শরীর কম মাত্রায় ক্যালসিয়াম শোষণ করে এবং রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। রক্তে ক্যালসিয়াম কমে গেলে প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ড বেশি মাত্রায় প্যারাথাইরয়েড হরমোন ক্ষরণ করে।
নারীদের ক্ষেত্রে ঋতুবন্ধের পরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি হয়। তাই সে সময়ে খাওয়া-দাওয়ায় বিশেষ নজর দিতে হবে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর রক্তে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা যায়।
ভিটামিন-ডি একটি স্নেহপদার্থে দ্রবণীয় ভিটামিন। অনেকসময় একে বলে ‘সাইশাইন ভিটামিন’। তৈলাক্ত মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ডি থাকে। পাশাপাশি মানুষের ত্বক রোদের সংস্পর্শে এলে শরীরে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। সামুদ্রিক মাছ, দুগ্ধজাত খাদ্য ও ডিমে ভিটামিন-ডি পাওয়া যায়।
ভিটামিন ডি হলো এমন এক ভিটামিন, যার ওপর মানুষের শরীর ও মন দুটিরই ভালো থাকা করে। এক দিকে ভিটামিন ডি হাড়-পেশির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে, আবার মনমেজাজও ভালো রাখতে পারে। ভিটামিন ডি-র অভাব হলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়, অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা তৈরি হয়, রোগ প্রতিরোধ শক্তিও কমে যায়।
হাড় শক্তিশালী করতে এবং পেশির যত্ন নিতে ভিটামিন ডি অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ডি-র অভাবে ভোগেন। শুধু হাড় মজবুত করতেই নয়, অস্থিসংক্রান্ত নানা রোগ, অস্টিয়োপোরেসিস-এর মতো রোগের ঝুঁকি কমায়। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধেও ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরে এই ভিটামিনের মাত্রা প্রয়োজনের থেকে বেশি হয়ে গেলেও নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি খেলে রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমা হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যালসিফিকেশন বলে, যার থেকে দেখা দিতে পারে হাইপারক্যালসিমিয়ার মতো রোগ। এর ফলে হার্টের অসুখ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
অতিরিক্ত ভিটামিন-ডি যাতে শরীরের ক্ষতি না করতে পারে তার জন্য বিশেষজ্ঞরা অনেক সময় এই ভিটামিনের সঙ্গে ভিটামিন-কে খাওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন-ডি যেখানে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি করে সেখানে ভিটামিন-কে হাড়ে ক্যালসিয়াম সঞ্চয়ের হার বৃদ্ধি করে। ফলে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে যায়। কমে হৃদরোগের ঝুঁকিও। প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন কে পাওয়া যায় সবুজ শাক, সবজি, ডিমের কুসুম, মাংসের মেটে ও চিজ-এ।
ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ- এর তথ্যানুযায়ী, ০-১ বছর বয়সি শিশুদের জন্য দৈনিক ভিটামিন ডি প্রয়োজন ০.০১ মিলিগ্রাম। ১-১৩ বছর বয়সীদের জন্যেও দৈনিক ভিটামিন ডি প্রয়োজন ০.০১৫ মিলিগ্রাম। ১৪-১৮ বছর বয়সিদেরও প্রতিদিন ০.০১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন। ১৯-৭০ বছর বয়সীদের নিয়মিত ০.০১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি খাওয়া প্রয়োজন। ৭১ বছর ও তার বেশি বয়সীদের দৈনিক ০.০২ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন ডি না খাওয়াই ভালো।
এ ছাড়া কিডনি ভালো রাখার জন্য বেশি প্রয়োজন ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম, আয়রন আর ভিটামিন বি১২। এগুলো কিডনি ভালো রাখতে সাহায্য করে।