Dhaka ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাগজে-কলমে পাঠাগার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ !

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৬:৩৮:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩
  • ২৩৫ Time View

আলমগীর হোসেন  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:-দেখে বাড়ির বেলকুনি মনে হলেও এটি একটি সরকারি নিবন্ধিত পাঠাগার। আশেপাশে নেই কোন সাইনবোর্ড কিংবা আলাদাভাবে চেনার উপায়। কাছে গিয়ে দেখা মিলে, বেলকুনির চারপাশে শোকাতে দেওয়া আছে ভেজা কাপড়। তার পাশে অনুদান পাওয়া দুটি বুকসেলফে কিছু বই, দুটি চেয়ার, একটি টেবিল৷এ ছাড়া আর পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব নেই৷ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের পূর্ব নারগুনে একটি বাড়ির বেলকুনিতে অবস্থিত গ্রামীণ পাঠাগারটি। অনুমোদনের নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য সাত বছর বয়স হওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে গড়ে দুই শতাধিক পাঠক হওয়ার কথা থাকলেও পাঠাগারটির নাম জানেননা এলাকাবাসী। এমনকি পাঠাগারের পরিচালকেরাও নাম বলতে হোচট খেয়েছেন কয়েক দফায়। অথচ নামে মাত্র এসব পাঠাগার গুলো কাগজে কলমে সচল পাঠাগার দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের দেওয়া তথ্য মতে,জেলায় নিবন্ধিত পাঠাগারের সংখ্যা ১২ টি৷ যার মধ্যে অধিকাংশ পাঠাগার এখন শুধু নাম সর্বস্ব। কারো ঘরের বেলকুনি,কারো বেড রুম কিংবা কারো নেই কোন অস্তিত্ব। তবে নামে মাত্র হয়েও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪ টি পাঠাগার,২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ টি পাঠাগার  অনুদান পেয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ০৮ টি পাঠাগার পাচ্ছেন  পাঁচ লাখ সাতান্ন হাজার টাকা অনুদান৷ তার মধ্যে ২ টি ‘গ’ শ্রেণীর পাঠাগার পাচ্ছেন ৫৫,০০০ টাকা করে, আর “খ” শ্রেণীর ৬ টি পাঠাগার পাচ্ছেন ৪৭,৫০০ টাকা। 

অনুদানের সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেন কাগজে কলমে থাকা পাঠাগারের সভাপতি ও সম্পাদক। নিয়ম মেনে তদারকি করে অনুদান প্রদানের সাথে অর্থ আত্মসাৎ কারীদের বিচারের দাবি জানান সচেতন মহল। 

স্থানীয়রা ও শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কখনো গ্রামীণ পাঠাগার নামে কোন পাঠাগারের নাম শোনেননি৷ তাদের এলাকায় পাঠাগার হলে তারা সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারতেন৷ 

 গ্রামীণ পাঠাগারের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, কাগজে কলমে আমাদের পাঠাগারটি ২০১৬ সালে দেখানো হয়েছে৷ আমরা সব ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই৷ বিগত দুই অর্থ বছরে আমরা সরকারি অনুদান পেয়েছি৷ এবারেও আমরা সরকারি অনুদান পাব৷ বর্তমানে তেমন কোন কার্যক্রম নেই। আমরা সামনে একটি ঘর তৈরী করে পাঠাগারটি চালু করব। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৬ নং নারগুন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে গ্রামীণ পাঠাগার রয়েছে এটি আজ জানতে পারলাম। কখনো এর কোন কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। যারা পাঠাগারের নামে টাকা আত্মসাৎ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি। 

অফিসে কর্মকর্তা সংকট হওয়ায় এমন অবস্থা জানিয়ে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান আম্বিয়া বেগম বলেন, পাঠাগার গুলোতে দুবছর আগে পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল। পরে আর যাওয়া হয়ে উঠেনা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা সরকারি অনুদান পেয়ে থাকেন৷ পরবর্তীতে আমরা তদারকি বাড়াব। 

নামে সর্বস্ব পাঠাগার গুলো আর অনুদান পাবেনা বলে সাফ জানিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, পাঠাগার সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। একটি সমাজকে জ্ঞান ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে। তবে পাঠাগারের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা সরকারি সম্পদ হাতিয়ে নেন তাদের সে সুযোগ আর দেওয়া হবেনা। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনি কাজ শুরু করব। কার্যক্রম হীন পাঠাগার গুলো আর কোন ধরনের সরকারি অনুদান পাবেননা৷ 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

কাগজে-কলমে পাঠাগার দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ !

Update Time : ০৬:৩৮:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ জুন ২০২৩

আলমগীর হোসেন  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:-দেখে বাড়ির বেলকুনি মনে হলেও এটি একটি সরকারি নিবন্ধিত পাঠাগার। আশেপাশে নেই কোন সাইনবোর্ড কিংবা আলাদাভাবে চেনার উপায়। কাছে গিয়ে দেখা মিলে, বেলকুনির চারপাশে শোকাতে দেওয়া আছে ভেজা কাপড়। তার পাশে অনুদান পাওয়া দুটি বুকসেলফে কিছু বই, দুটি চেয়ার, একটি টেবিল৷এ ছাড়া আর পাঠাগারের কোন অস্তিত্ব নেই৷ 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের পূর্ব নারগুনে একটি বাড়ির বেলকুনিতে অবস্থিত গ্রামীণ পাঠাগারটি। অনুমোদনের নীতিমালা অনুযায়ী নিবন্ধনের জন্য সাত বছর বয়স হওয়ার পাশাপাশি প্রতি মাসে গড়ে দুই শতাধিক পাঠক হওয়ার কথা থাকলেও পাঠাগারটির নাম জানেননা এলাকাবাসী। এমনকি পাঠাগারের পরিচালকেরাও নাম বলতে হোচট খেয়েছেন কয়েক দফায়। অথচ নামে মাত্র এসব পাঠাগার গুলো কাগজে কলমে সচল পাঠাগার দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারি তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা।

জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের দেওয়া তথ্য মতে,জেলায় নিবন্ধিত পাঠাগারের সংখ্যা ১২ টি৷ যার মধ্যে অধিকাংশ পাঠাগার এখন শুধু নাম সর্বস্ব। কারো ঘরের বেলকুনি,কারো বেড রুম কিংবা কারো নেই কোন অস্তিত্ব। তবে নামে মাত্র হয়েও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪ টি পাঠাগার,২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ টি পাঠাগার  অনুদান পেয়েছেন কয়েক লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ০৮ টি পাঠাগার পাচ্ছেন  পাঁচ লাখ সাতান্ন হাজার টাকা অনুদান৷ তার মধ্যে ২ টি ‘গ’ শ্রেণীর পাঠাগার পাচ্ছেন ৫৫,০০০ টাকা করে, আর “খ” শ্রেণীর ৬ টি পাঠাগার পাচ্ছেন ৪৭,৫০০ টাকা। 

অনুদানের সব টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করেন কাগজে কলমে থাকা পাঠাগারের সভাপতি ও সম্পাদক। নিয়ম মেনে তদারকি করে অনুদান প্রদানের সাথে অর্থ আত্মসাৎ কারীদের বিচারের দাবি জানান সচেতন মহল। 

স্থানীয়রা ও শিক্ষার্থীরা জানান, তারা কখনো গ্রামীণ পাঠাগার নামে কোন পাঠাগারের নাম শোনেননি৷ তাদের এলাকায় পাঠাগার হলে তারা সেখানে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারতেন৷ 

 গ্রামীণ পাঠাগারের সভাপতি মোহাম্মদ নুরুদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী বলেন, কাগজে কলমে আমাদের পাঠাগারটি ২০১৬ সালে দেখানো হয়েছে৷ আমরা সব ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা পাই৷ বিগত দুই অর্থ বছরে আমরা সরকারি অনুদান পেয়েছি৷ এবারেও আমরা সরকারি অনুদান পাব৷ বর্তমানে তেমন কোন কার্যক্রম নেই। আমরা সামনে একটি ঘর তৈরী করে পাঠাগারটি চালু করব। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ১৬ নং নারগুন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নে গ্রামীণ পাঠাগার রয়েছে এটি আজ জানতে পারলাম। কখনো এর কোন কার্যক্রম আমার চোখে পড়েনি। যারা পাঠাগারের নামে টাকা আত্মসাৎ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জোড় দাবি জানাচ্ছি। 

অফিসে কর্মকর্তা সংকট হওয়ায় এমন অবস্থা জানিয়ে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের সহকারী লাইব্রেরিয়ান আম্বিয়া বেগম বলেন, পাঠাগার গুলোতে দুবছর আগে পরিদর্শনে যাওয়া হয়েছিল। পরে আর যাওয়া হয়ে উঠেনা। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তারা সরকারি অনুদান পেয়ে থাকেন৷ পরবর্তীতে আমরা তদারকি বাড়াব। 

নামে সর্বস্ব পাঠাগার গুলো আর অনুদান পাবেনা বলে সাফ জানিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, পাঠাগার সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। একটি সমাজকে জ্ঞান ও শিক্ষায় সমৃদ্ধ করে। তবে পাঠাগারের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা সরকারি সম্পদ হাতিয়ে নেন তাদের সে সুযোগ আর দেওয়া হবেনা। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা এখনি কাজ শুরু করব। কার্যক্রম হীন পাঠাগার গুলো আর কোন ধরনের সরকারি অনুদান পাবেননা৷