আফতাব হোসেন:
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল ও একসপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে তিস্তার নদীর পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে বিপদ সীমার ৩৬ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে গতকাল বিকাল থেকে কিছুটা কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে তিস্তা পাড়ের মানুষজনের। তবে ভাটি এলাকা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষজন চিন্তিত রয়েছে। নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও স্থিতিশীল রয়েছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে। চলতি বছর কয়েক দফা বন্যার কবলে পড়া কৃষি নির্ভর এসব মানুষ মাথা তুলে দাড়াতে না দাড়াতেই ফের বন্যা আতংকে সময় পার করছেন। তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বড় ধরণের বন্যার সম্ভাবনা না থাকলেও
কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন নদী ও চরাঞ্চলের মানুষজন।
এদিকে, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলায় তিস্তা পানি কমতে শুরু করায় মানুষজনের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। এই উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের অন্ততপক্ষে ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ডুবে যায় ২শ হেক্টর জমির রোপা আমন ও বিভিন্ন ধরণের সবজি। পানির সাথে মাটি থাকায় রোপা আমন বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ বন্যা কবলিত এলাকায় ৩০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, পাটগ্রাম, কালিগঞ্জ আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। বন্যার্ত এলাকায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। লালমনিরহাটে গোকুন্ডা ইউনিয়নের রতিপুর এলাকায় অর্ধকিলোমিটার রেলপথ ডুবে যায়। তবে ট্রেন চলাচল এখন স্বাভাবিক রয়েছে। গতকাল (রবিবার) থেকে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ডুবে গেছে ৫শ হেক্টর জমির আমন ধান ও বিভিন্ন ধরণের সবজি ও বীজতলা। বন্যার্ত এলাকার ২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়।
রংপুর জেলার গ্ঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এই জেলার প্রায় ১০ হাজার বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। ডুবে গেছে ৩শ হেক্টর জমির রোপা আমন ও বিভিন্ন ধরণের সবজি ক্ষেত।
গাইবান্ধায় তিস্তা নদীর পানি গতকাল (রবিবার) পর্যন্ত বাড়লেও আজ সকাল থেকে ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, হরিপুর, বেলকা, চন্ডিপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে নিমাঞ্চল ডুবে গেছে। চাষীদের রোপনকৃত আমন ও গাইনজা, সবজি ও সবজি বীজতলা ডুবে গেছে। পাউবো’র প্রকৌশলী নির্বাহী হাফিজুল ইসলাম জানান, পানি কমতে থাকায় বড় ধরণের বন্যার সম্ভাবনা নেই। কাপাসিয়া চরের আব্দুল আলিম জানান, নদীর পানির সাথে মাটি আসছে এককারণে রোপা আমন পচে যাওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। হরিপুর ইউনিয়নের চাষী আব্দুর রহমান বলেন ৩বিঘা জমি মরিচ চাষের জন্য তৈরি করেছিলাম কিন্তু পানি ওঠায় ক্ষতি হয়ে গেলে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ—পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, বৃষি আমন ধানের উপকার হলেও সবিজ চাষে কিছুটা বাঁধা হলো। এরপরেও চাষীর এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে চার জেলায় পানিবন্দী মানুষজনের মধ্যে নারী শিশু ও প্রতিবন্দীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এই সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন স্থবিরতা দেখা যায়। শ্রমজীবীরা কাজ কর্মে যেতে না পাড়ায় বন্যা কবলিত মানুষজনের খাদ্য ও কৃষি বীজ ও উপকরণ সামগ্রী ক্রয়ে অর্থ সংকটে পড়েছে। এছাড়াও চাষীদের আমন ও প্রস্ততকৃত সবজি বীজতলা ডুবে যাওয়ায় চরম হতাশায় দিন পার করছে।
এদিকে চার জেলায় পানিবন্দী মানুষজনের মধ্যে নারী শিশু ও প্রতিবন্দীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। কেননা এই সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন ও পশুপ্রাণির মধ্যেও স্থবিরতা দেখা যায়। শ্রমজীবীরা কাজ কর্মে যেতে না পাড়ায় বন্যা কবলিত মানুষজনের অর্থ, খাদ্য, কৃষি বীজ ও উপকরণ সামগ্রী ক্রয়ে অর্থ সংকটে পড়েছে। এছাড়াও চাষীদের আমন ও প্রস্ততকৃত সবজি বীজতলা ডুবে যাওয়ায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন।