
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ
বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তালার মত সম্ভাবনাময় জোন সৃষ্টি হয়েছে সেতু পয়েন্ট। কিছুটা রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের মতই। কথাগুলো বলেন সেতু পয়েন্টে ঘুরতে আসা দর্শণার্থী মোরশেদা বেগম। তার ভাষ্য এখনও সেতুর কাজ শেষ হয়নি। কোন দোকানপাট নেই এমনকি বসার জায়গাও নাই। তারপরও প্রতিদিন পরিজন নিয়ে তিস্তা নদীর মুক্ত বাতাস অনুভব করার জন্য আসা মানুষগুলো কতই না আনন্দ উপভোগ করছে।
স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসএএস এর নিবার্হী পরিচালক এবিএম নুরুল আকতার মজনু বলেন, উপজেলা ছাড়াও গাইবান্ধা জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন বিকাল ৪ টা হতে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত হাজারও দর্শক এখানে আসে। ঈদ উপলক্ষে এর পরিধি আর বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে ছোট নৌকা নিয়ে নদীর মধ্যে ঘুরে রেড়ায়। আবার অনেকে নদীর ধার দিয়ে পায়চারি করে। দর্শণার্থীদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা অনেকটা বেশি। তবে শিশুরাও মা বাবার সাথে আসছে প্রতিদিন। এখানে তেমন কোন দোকানপাট নেই। ভাসমান কয়েকটি দোকান রয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র বিস্কুট, চেনাচুর, কলা, রুটি, পটেটো পাওয়া যায়। ঈদের কারনে চরকি, খেলনার দোকান, মাটির খেলান আসবাসপত্র, এবং ঘোড়ার পিঠে উঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
ছোট নৌকার মাঝি আব্দুর রাজ্জাক জানান,ঈদের কারনে দর্শণার্থীর ভির বেড়ে গেছে। অল্প পানি নদীতে, তারপরও ঘোরার সুযোগ রয়েছে। পানি কমে গেলে ওই ভাবে ঘোরার সুযোগ থাকবে না। সারাদিন লোকজন থাকে না, বিকাল বেলায় কিছু লোকজন ঘুরতে আসে। ঈদ উপলক্ষে অসংখ্য লোকজনের ভির। প্রতিদিন কমবেশি দুই হতে তিন হাজার টাকা রোজগার হচ্ছে ঈদ উপলক্ষে।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর- কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করছেন চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করছেন সৌদি ডেভেলোপম্যান্ট ফান্ড। এতে ব্যয় হবে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সেতুটিতে পিলার থাকবে ৩০টি এর মধ্যে ২৮টি পিলার থাকবে নদীর ভিতরে অংশে এবং ২টি পিলার থাকবে বাহিরের অংশে। সেতুর উভয়পাশে^ নদী শাসন করা হবে ৩.১৫ কিলোমিটার করে। সেতুর উভয় পাশে^ সড়ক নির্মাণ করা হবে ৫৭. ৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে চিলমারি মাটিকাটা মোড় থেকে সেতু পর্যন্ত ৭.৩ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর ধাপেরহাট থেকে হরিপুর সেতু পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার। চিলমারী অংশে একসেস সড়ক সেতু থেকে কাশিম বাজার পর্যন্ত ৫.৩ কিলোমিটার এবং গাইবান্ধা ধাপেরহাট থেকে হরিপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধার সার্কিট হাউজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুরÑচিলমারি তিস্তা সেতুর ভিত্তি উদ্বোধন করেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের পর ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে সংযোগ সড়কসহ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল বা রয়েছে।
তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরিওতুল্লাহ মাষ্টার বলেন, ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু করা হয়। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামানিকের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজের সুচনা হয়।
হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, তিস্তা পিসি গার্ডার সেতু পয়েন্টটি এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। এখানে প্রতিদিন হাজার দর্শণার্থী ঘোড়াঘুড়ি ও ছবি তোলার জন্য আসছেন। তবে ঈদ উপলক্ষে এত সংখ্যক লোকজনের ভির লক্ষ করা গেছে যা কল্পনা করার মত নয়। তিনি আশাবাদী ভবিষতে এই অঞ্চলটি বিনোদন জোনে পরিনত হবে।
থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিস্তা সেতু পয়েন্পে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ টহল দিচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে জেলার বাইর থেকেও লোকজন আসছেন।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, সেতুটির নির্মাণ কাজ যখন শেষ হবে, তখন আসলেই সেতু পয়েন্টেটি একটি চমৎকার বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠবে। সেতুর দুইধারে যখন ব্লকদিয়ে নদীরক্ষা সড়ক নির্মাণ হবে হতে তখন এটি দেখতে অনেকটা ভাল লাগবে। সেতুর দুই পাশে^ই আসলে বিনোদনের জোন সৃষ্টি হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। সম্ভাবনাময় এই পয়েন্টে এখন শিল্পপতির সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। এখানকার মানুষজনের জন্য এটি একটি অর্থনৈতিক জোনে পরিনত হবে। অল্প সময়ের মধ্যে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।