
চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত হতে পারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলের নাম। গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও কমিটি গঠন শেষ হওয়া সাপেক্ষে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান হতে পারে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি।
রাজনৈতিক দলটির পাশাপাশি নতুন একটি ছাত্র সংগঠনের ঘোষণাও আসতে পারে। প্রাথমিকভাবে দল এবং ছাত্র সংগঠন তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।
নতুন দলের আহ্বায়ক হিসেবে বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নিতে পারেন। তবে দলের দায়িত্ব নিলে সরকারের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন নাহিদ ইসলাম।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে নাহিদ বলেছেন, ‘ছাত্রদের নেতৃত্বে একটা নতুন রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনা বা আলোচনা রয়েছে। সে দলে অংশগ্রহণ করতে হলে সরকারে থেকে সেটি সম্ভব নয়।
এ ছাড়া দলের সদস্যসচিব হিসেবে আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এ ছাড়া দলের শীর্ষ ফোরামে থাকছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
জানা গেছে, এখন দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন, ঘোষণাপত্র এবং আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটি ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কাজ করছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) ও জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) এই দুটি ফোরামের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা থাকবেন। এ ছাড়া দেশে নারী অধিকার জাগ্রত করতে কমিটির শীর্ষ পদে দেখা যেতে পারে বেশ কয়েকজন নারী সংগঠককে। নতুন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ঠিক করতে এরই মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সংগঠন দুটির শীর্ষ নেতারা।
নতুন দলের গঠনতন্ত্র, দলের নাম ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাশা জানতে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠন দুটির চলমান জনমত জরিপের কার্যক্রম ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন রাজনৈতিক দলের সব ধরনের কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। বৈশ্বিক বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের পদ্ধতি ও তাদের কার্যক্রমগুলো পর্যালোচনা করছি। এ ছাড়া দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নানা ধরনের রাজনৈতিক অনুশীলনও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো আমাদের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে উল্লেখ থাকবে। আমরা চলতি মাসে আত্মপ্রকাশ করে খুব দ্রুতই রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করব।’
তবে নতুন রাজনৈতিক দল কিভাবে নির্বাচনে যাবে, সে বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা ও কৌশলপত্র নির্ধারণ করা হচ্ছে। দলে নেতৃত্ব নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক চর্চায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া দলটির কার্যক্রম মানুষের মধ্যে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ব্যতিক্রম বেশ কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এর মধ্যে জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের বাড়ি থেকে লং মার্চ শুরু করে চট্টগ্রামের শহীদ ওয়াসিমের বাড়ি পর্যন্ত লং মার্চের মাধ্যমে দলের ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাওয়ার জন্য কতটুকু প্রস্তুত—এমন প্রশ্নের জবাবে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘এরই মধ্যে সারা দেশে বিভিন্ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিছু কমিটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের মানুষকে নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমরা কোনোভাবেই চাই না, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পলাবদলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটুক। এটি প্রতিরোধের নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। একটি প্রশ্নহীন নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলেই কেবল ছাত্রদের এই রাজনৈতিক দল নির্বাচনে যাবে। যেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথাযথ উন্নতি হবে। পাশাপাশি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে সাধারণ মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে।’